সাঁড়াশি অভিযানে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বড় সাফল্য: ৬৩,০০০-এর বেশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা | বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫

সারাদেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে চলমান সাঁড়াশি অভিযানে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট, একদিনেই একাধিক অঞ্চলে পরিচালিত অভিযানে ৬৩,৩৯০টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ এবং আর্থিক জরিমানার ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস চোরচালানে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের “শিকড় উপড়ে ফেলার” ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিতাস গ্যাসের জোবিঅ-জয়দেবপুর ও আবিবি-জয়দেবপুর অঞ্চলের আওতাধীন গাজীপুরের খাইলকুর ও কুনিয়া তারগাছ এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে: ২০০ ফুট ৩/৪ ইঞ্চি পাইপলাইন উচ্ছেদ,২০০টি অবৈধ ডাবল চুলা জব্দ,একজন গ্রাহককে ৩০,০০০ টাকা জরিমানা

তিতাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এই অভিযানে গ্যাস চোরচালানকারীদের কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

জোবিঅ-নরসিংদী ও আবিবি-নরসিংদী অঞ্চলের আওতায় মাধবদীর আলগী, খোজ পাড়া, রিফজি পাড়া ও পূর্বপাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে: ১০ ফুট জিআই পাইপ, ৩০০ ফুট এমএস পাইপ এবং ৪০০ ফুট পিভিসি পাইপ জব্দ,৬টি অবৈধ ডাবল চুলা জব্দ,১টি সংযোগ বকেয়ার কারণে বিচ্ছিন্ন, আবাসিক লাইনে বাণিজ্যিক গ্যাস ব্যবহারের দায়ে ১ জনকে ৩,০০০ টাকা জরিমানা

তিতাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানে দেখা গেছে—অনেকেই আবাসিক লাইনে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক সুবিধা গ্রহণ করছেন, যা আইনগতভাবে গুরুতর অপরাধ।

জোবিঅ-ময়মনসিংহ ও আবিবি-ময়মনসিংহ অঞ্চলের আওতায় মুক্তাগাছার নন্দীবাড়ী, মনিরাম বাড়ী, লক্ষীখোলা ও পায়রাকান্দি এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে: ৮টি ডাবল বার্নার ও ২টি সিঙ্গেল বার্নার জব্দ,৭টি রাইজার কিলিং/ক্যাপিং করা হয়

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এইসব এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে বার্নার ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাই এ অভিযানকে তারা “অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন।

তিতাস গ্যাস জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযানে: ২৯৩টি শিল্প, ৩১৭টি বাণিজ্যিক, ও ৬২,৭৮০টি আবাসিক সংযোগসহ মোট ৬৩,৩৯০টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন,১,২০,০১৬টি অবৈধ বার্নার অপসারণ,২৩৫.২ কিলোমিটার পাইপলাইন ধ্বংস ও অপসারণ

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর ব্যবস্থাপক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মোঃ আল-আমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়:“অবৈধ গ্যাস সংযোগ শুধু সংস্থার আর্থিক ক্ষতি করে না, বরং এটি জনজীবনের জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

এই কার্যক্রম আরও জোরালোভাবে চলবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেই হবে না, বরং যেসব অসাধু কর্মকর্তা ও দালাল এই সংযোগের সুযোগ করে দেয়, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

তারা বলেন:“এই অভিযান কার্যকর ও টেকসই করতে হলে প্রশাসনিক সমন্বয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া একযোগে প্রয়োগ করতে হবে।”

তিতাস কর্তৃপক্ষ ও বিশ্লেষকদের মতে, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রতিরোধে গণমাধ্যম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।

জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা দীর্ঘমেয়াদে কঠিন হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা।