ডাকসুতে স্বতন্ত্র প্যানেল দেওয়ার ঘোষণা উমামা ফাতেমার: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যুক্ত হওয়ার আহ্বান

মো. শাহজাহান বাশার | সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৩১ জুলাই ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থী অধিকার আন্দোলনের অগ্রণী সংগঠক হিসেবে পরিচিত উমামা ফাতেমা। এক স্ট্যাটাসে নিজের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি এ ঘোষণা দেন এবং আগ্রহীদের তার প্যানেলে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে উমামা ফাতেমা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায়, নৈতিক অবস্থানে অটল থেকে, কোনো দলের ছায়াতলে না গিয়ে, একটি গবেষণাভিত্তিক ও কল্যাণকামী ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল দিচ্ছি।”

উমামা ফাতেমা উল্লেখ করেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে থেকে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে আসছেন। বৈধ সিট আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি লেখেন,“প্রথম বর্ষে থাকাকালীন ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলি। তখন থেকেই আমি অনুধাবন করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা কোনো সাধারণ কর্মসূচি দিয়ে দূর করা সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন একটি বড় ধরনের সংস্কারমূলক বিপ্লব, যা শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া সম্ভব নয়।”

উমামা তার স্ট্যাটাসে লেখেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই ছাত্র সংসদে শিক্ষার্থীরা এমন নেতৃত্ব চান যারা কোনো পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন না, বরং একান্তভাবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু ‘নেতা তৈরি’র কারখানা বানিয়ে রাখা যাবে না। এটি হতে হবে গবেষণাবান্ধব, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার কেন্দ্র।”

তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন হতে হবে রাজনৈতিক মুক্ত, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, যাতে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ডাকসু গঠিত হয়।

স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি লিখেছেন,“আপনারা যারা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করা জরুরি, যারা চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার হারানো গৌরব ফিরে পাক, যারা বিশ্বাস করেন শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার—তাদের আমি আমাদের প্যানেলে যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। চলুন, একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি।”

তিনি পোস্টের প্রথম কমেন্টে একটি অনলাইন ফর্ম লিংক শেয়ার করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্যানেলে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

উমামা ফাতেমার এই ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচনে একটি সত্যিকার স্বতন্ত্র ও ছাত্র-কল্যাণনির্ভর প্যানেলের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী মহলের অনেকে তার ঘোষণাকে সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“ডাকসুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যদি দলীয় রাজনীতির বাইরে রেখে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়, তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।”

ডাকসু নির্বাচনে উমামা ফাতেমার স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হলো বলেই মনে করছেন অনেকেই। এখন দেখার বিষয়, অন্যান্য শিক্ষার্থী ও প্যানেল এই উদ্যোগের প্রতি কী ধরনের সাড়া দেয় এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী রাজনীতিতে এর প্রভাব কেমন পড়ে।