অনলাইন জুয়া—এক নীরব সর্বনাশ ✍️ মাহমুদুল হাসান কালাম

মোহাম্মদ মাহামুদুল

 

বর্তমানে আমাদের সমাজে যে ব্যাধিটি নীরবে বিস্তার লাভ করছে, তার নাম অনলাইন জুয়া। মোবাইল ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও প্রযুক্তিগত ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে এই ব্যাধি দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। কেবল বিনোদনের নামে নয়, একে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলছে বহু মানুষ—যার মাশুল দিতে হচ্ছে পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রকেও।

পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এই অর্থপাচার হচ্ছে কোনো গোপন চ্যানেল দিয়ে নয়—বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমেই। অথচ এইসব লেনদেন অনায়াসে নজরদারির আওতায় আনা সম্ভব, যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে।

এই আসক্তির শিকার হয়ে বহু তরুণ তাদের লেখাপড়া, কর্মজীবন ও পারিবারিক শান্তি বিসর্জন দিচ্ছে। জুয়ার আশায় তারা কখনো কখনো ঋণগ্রস্ত হচ্ছে, আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। আর এই দুঃখজনক পরিস্থিতি ঘটছে দিনের আলোতে—আমরা সবাই দেখছি, জানি, অথচ কার্যকর কিছু করছি না।

প্রশ্ন উঠেছে—সরকার চাইলে কি এ অবস্থা বন্ধ করা সম্ভব নয়?
হ্যাঁ, প্রযুক্তিগতভাবে এটি পুরোপুরি সম্ভব। সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা, আন্তর্জাতিক জুয়া সাইট ও অ্যাপ ব্লক করা, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেওয়া—এসবই কেবল সদিচ্ছা ও সমন্বিত উদ্যোগের ব্যাপার।

আমরা ভুলে গেলে চলবে না, এটি শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি এক ভয়াবহ নৈতিক ধস। একটি প্রজন্ম যখন শ্রম ও মেধার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর ভর করে জীবন গড়ার চেষ্টা করে, তখন সে প্রজন্মের ভরাডুবি অবধারিত।

এই অবস্থায় যা প্রয়োজন—

আইনের কঠোর প্রয়োগ

প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি

মিডিয়ায় সচেতনতামূলক প্রচার

এবং পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকা।

আমরা জাতি হিসেবে অনেক কিছু হারাতে পারি, কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হারানোর ঝুঁকি নেওয়া আমাদের কারও কাম্য নয়। আজ যদি আমরা চোখ বন্ধ রাখি, কাল হয়তো এই ব্যাধি আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই গিলে ফেলবে।

মাহমুদুল হাসান কালাম একজন সমাজভাবুক ও তরুণ লেখক । তিনি সামাজিক সচেতনতা ও প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ নিয়ে লেখালেখি করেন।