কোন্দল ও বিভাজনের সুযোগ নেবে ফ্যাসিস্ট শক্তি

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার:

রাজনীতিতে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ও নিজেদের মধ্যে কোন্দল দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এমন পরিস্থিতি ফ্যাসিস্টদের পুনরায় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সুযোগ করে দিতে পারে, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গণঅভ্যুত্থান মাসব্যাপী কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে যুবদল আয়োজিত গ্র্যাফিতি আর্টস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করছে সরকার: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ইনডাইরেক্টলি দোষারোপ করার অপচেষ্টা করছে। তারা বলছে, আমরা সহযোগিতা করছি না—এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।”

তিনি অভিযোগ করেন, “সরকার গণতন্ত্রের নামে দেশকে একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্র চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা যদি নিজেদের মধ্যে বিভাজিত হয়, তাহলে লাভ হবে কেবল ফ্যাসিস্টদের।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যেই এমন কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়াচ্ছি, যেগুলো আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এই কোন্দল দেশের অগ্রগতি রুদ্ধ করে দিতে পারে, ফ্যাসিস্টদের আবারও শক্তি জোগাতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমরা যদি অতীত ভুলে যাই, একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই, তবে যারা জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে দিয়েছে, তাদের হাতেই দেশ আবারও জিম্মি হয়ে পড়বে।”

গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ‘গণঅভ্যুত্থান’ উপলক্ষে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান এক বছর হয়ে গেল। হাসিনার বিচার বিষয়ে আজও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। কেন হয়নি?”

তিনি বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাবন্দি করা হয়েছে। শুধু গত জুলাই মাসেই শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। অথচ তারা কেউই আত্মসমর্পণ করেননি বা সরকারের চাপের মুখে মাথা নত করেননি।”

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “সরকার নানা প্রলোভন ও চাপের মাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীদের দমন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু একবারের জন্যও আমাদের কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। এমনকি কেউ মুচলেকাও দেয়নি। এটাই আমাদের শক্তি ও মনোবল।”

তিনি জানান, “জুলাই আন্দোলনে যুবদলের ৭৯ জন এবং ছাত্রদলের ১৪২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তারা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না।”

বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “তাকে একটি মিথ্যা মামলায় পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। আজ গণতন্ত্রের জন্য যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই খালেদা জিয়ার কথা কেউ বলেন না। অথচ দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে তার অবদান অবিস্মরণীয়।”

তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলুন। সত্যকে লুকিয়ে রাখবেন না। যাদের অবদান আছে, তাদের সেই অবদানকে স্বীকৃতি দিন।”

এ সময় মির্জা ফখরুল দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো নিজেদের মধ্যে বিভাজন নয়, বরং শক্তিশালী ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটানো। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের সংগ্রাম চলবে।”