
মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশে আবারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, গুম-খুন ও মাফিয়াতন্ত্রের রাজনীতি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হচ্ছে, যা দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।”
রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে ঝালকাঠি শহরের কাপড়িয়া পট্টি এলাকার একটি ভবনের সামনে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্য চলাকালে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যেও উত্তেজনা ও ক্ষোভের ছাপ পরিলক্ষিত হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের মাফিয়াতন্ত্র, রাজনৈতিক গুম, খুন এবং চাঁদাবাজির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি। এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে, গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতেই নয়, বরং জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনই হবে জনগণের প্রকৃত রায় এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতার প্রাথমিক শর্ত।”
তিনি বলেন, “রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে, ভয়ভীতির এই দমনমূলক পরিবেশ দূর করতে হবে। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যেন আবার পুরনো দখলদার, গুম-খুনের রাজনীতিতে না ফিরে যাই—এই চেতনাই জুলাই আন্দোলনের মূল শিক্ষা। কিন্তু বর্তমান সরকার ঠিক তার বিপরীত পথে হাঁটছে।”
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শিরোনামে এনসিপির কর্মসূচিতে ঝালকাঠির নানা স্থান থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। কাপড়িয়া পট্টি এলাকায় আয়োজিত পথসভায় সাধারণ জনগণের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে, যারা বর্তমান দমননীতি ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছেন কিন্তু নিরাপত্তার ভয়ে নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
একজন পথসভায় উপস্থিত যুবক বলেন, “আমরা পরিবর্তন চাই। কিন্তু কথা বললেই গায়েব হয়ে যাওয়ার ভয় পাই। নাহিদ ভাই যেভাবে প্রতিবাদ করছেন, আমরা তেমন প্রতিবাদ করতে পারি না। কিন্তু মনে মনে সমর্থন করি।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “বর্তমান সরকার জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী কাজ করছে। আমরা লক্ষ্য করছি, বিরোধী কণ্ঠ দমন করতে আবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে ভয়ের কোনো স্থান নেই, অথচ এখানে ভয়কেই প্রধান অস্ত্র বানানো হয়েছে। এটা স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
তিনি বলেন, “ভয়ের সংস্কৃতি চালিয়ে কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণই শেষ কথা বলে—এটি ইতিহাস বহুবার প্রমাণ করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব, কিন্তু জনগণের পক্ষে কখনও পিছু হটব না।”
পথসভায় অন্যান্য বক্তারাও সরকারবিরোধী নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, দেশে গুম, খুন, নির্যাতন এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করা না হলে অবাধ নির্বাচন অসম্ভব বলে তারা মন্তব্য করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই কর্মসূচি এবং নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘জুলাই সনদ’ এবং ‘ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান’—এই দুই স্লোগান পরবর্তী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে এমন বক্তব্য ও কর্মসূচি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।