
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামীর নাম এলেই বিভ্রান্তি, মিথ্যাচার এবং ধর্মের অপব্যবহারের এক দীর্ঘ অধ্যায়ের কথা উঠে আসে। দলটি নিজেদের ইসলামের ধারক-বাহক হিসেবে প্রচার করলেও বাস্তবতা হলো—তাদের রাজনীতি কখনোই ইসলাম, দেশ, বা মানবকল্যাণের পক্ষে ছিল না। বরং তারা যুগে যুগে ধর্মের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করেছে, সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে।
জামায়াত মানেই ইসলাম নয়
বাংলাদেশে একটি দীর্ঘদিনের প্রচার ছিল: “জামায়াত মানেই ইসলাম।” কিন্তু ইতিহাস, তাফসির, আকীদা এবং আচার-আচরণে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর মতবাদ ইসলামের মূল ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন আবুল আলা মওদুদী, যিনি ইসলামের আধ্যাত্মিক ও মানবিক দিক উপেক্ষা করে একধরনের রাজনৈতিক ইসলামের ধারণা দেন। অনেক ওলামায়ে কেরাম ও তরিকতের পীর-মাশায়েখরা মওদুদীর মতবাদকে “ধর্মের রাজনীতিকরণ” ও “আখলাক ধ্বংসের ফিকির” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ইসলামের বিস্তার সন্ত্রাস নয়, সুফিবাদের মাধ্যমে
বাংলার মাটিতে ইসলাম এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে নয়, এসেছে ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ত্যাগের মাধ্যমে। হযরত শাহ জালাল (রহ.), হযরত খান জাহান আলী (রহ.), হযরত বাবা আদম শহীদ (রহ.) প্রমুখ অলি-আউলিয়ারা এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছেন মানবতার আলো ছড়িয়ে। তাঁদের দরগাহে আজো লাখো মানুষ ভিড় করে—তাঁরা রাজনীতি করেননি, বরং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন।
জামায়াত কখনোই এই পবিত্র ঐতিহ্যের ধারক ছিল না। তারা বরং এই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও জামায়াতের ভূমিকা
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল কলঙ্কজনক। তারা পাকিস্তানের পক্ষে থেকে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতি এখনো এই দায় ভুলতে পারেনি।
এ কারণে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এ দেশের ইতিহাসের এক কলঙ্ক মোচনের পদক্ষেপ নেয়, যা প্রশংসিত হয়েছে দেশ-বিদেশে।
ধর্মের মুখোশে রাজনীতি: জনগণের সঙ্গে প্রতারণা
জামায়াত সবসময় ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। তারা মসজিদে মাইক দিয়ে, মাদ্রাসায় ছদ্মবেশে, আর ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছে। অথচ তাদের আচরণে না আছে সহনশীলতা, না আছে ইসলামের সৌন্দর্য। রাজনীতিতে তারা বরাবরই ষড়যন্ত্র, জোটের রাজনীতি, গোপন এজেন্ডা এবং পাকিস্তানপন্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু তারা কখনোই ধর্মের নামে রাজনীতির অপব্যবহার বরদাশত করে না। জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো ইসলাম নয়, ইসলামকে পুঁজি করে ক্ষমতা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ভণ্ডামি থেকে রক্ষা করতে হলে, ধর্মের প্রকৃত সৌন্দর্য—সুফি ঐতিহ্য, মানবতা ও সহনশীলতা—পুনরুদ্ধার করতে হবে।