পশুর খাদ্যকে মৎস্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না : ফরিদা আখতার

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার:

জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ২০২৫-এ আলাদা ধারায় অন্তর্ভুক্তির দাবি,পশু খাদ্যকে কোনোভাবেই মৎস্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পশু খাদ্য ও মৎস্য খাদ্য প্রায় একাকার হয়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত হুমকি তৈরি করছে। এই সমস্যা নিরসনে জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ২০২৫-এ বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন।”

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ২০২৫ (খসড়া)’ বিষয়ক অংশীজন পরামর্শ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, “ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করে নয়, বরং পরিবেশবান্ধব উপায়ে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ করেই চিংড়ি চাষ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি এখন অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি বলেন, “শুধু অবৈধ জাল ধ্বংস করলেই হবে না, জাল উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা উপাদান দিয়েই এসব ক্ষতিকর জাল তৈরি হচ্ছে, যা দেশীয় মাছের প্রজনন ও পরিবেশের জন্য হুমকি।”

বিদেশি মাছ আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোগে অনেক সময় বিদেশি প্রজাতির ক্ষতিকর মাছ দেশে প্রবেশ করছে, যা একবার প্রকৃতিতে প্রবেশ করলে দেশীয় প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি তৈরি করে। এমন মাছের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলে তা নিধনের নির্দেশ দেওয়া হলেও, শুরুতেই আমদানি নিরুৎসাহিত করা গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।”

মৎস্যজীবীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় নীতিমালায় আরো সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংযোজনের দাবি জানান উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, “মাছের ধরণ অনুযায়ী মৎস্যজীবীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে উপযুক্ত সহায়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় মৎস্য খাতকে কৃষির উপখাত হিসেবে মনে করা হয়, যার ফলে বিদ্যুৎ ছাড়, ভর্তুকি ও সরকারি প্রণোদনায় তারা অবহেলিত থাকেন। অথচ কৃষির মতোই এই খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

তিনি জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ২০২৫-এ এ ধরনের বৈষম্য দূর করে মৎস্যজীবীদের অধিকার, প্রণোদনা এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওচুন শি। এছাড়া অংশ নেন মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ ফিশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও অংশীজন প্রতিনিধি।

জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ২০২৫ যাতে একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং মৎস্যজীবী বান্ধব কাঠামোতে রূপ নেয়—সে বিষয়ে জোর দাবি জানানো হয় এই কর্মশালায়। অংশগ্রহণকারী সকলেই একমত পোষণ করেন যে, মৎস্যখাতকে আরো সুসংগঠিত ও আধুনিক করতে হলে সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক ও অংশীজনদের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ নীতিমালাই পারে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এনে দিতে।