
মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সরাসরি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত এবং এ লড়াইয়ে ‘জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠীর’ প্রতি কোনো প্রকার দয়া প্রদর্শন করা হবে না। সম্প্রতি ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের ওপর পরিচালিত ভয়াবহ বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত একাধিক বার্তা এবং একটি ভিডিও বক্তব্যে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন,
“ইরানে হামলা করে জায়নবাদীরা গুরুতর অপরাধ করেছে। আল্লাহর কসম, এই হামলার ফলাফল ভয়াবহ হবে এবং জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না, আমাদের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”
গত ১৩ জুন শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী (আইএএফ) ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ৮টি শহরে একযোগে বিশাল বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক স্থাপনা এবং কমিউনিকেশন সিস্টেম। এ হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও প্রায় ৩০০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০টিরও বেশি কৌশলগত স্থাপনা।
এই হামলাকে তেহরান সরাসরি একটি “যুদ্ধের ঘোষণা” হিসেবে অভিহিত করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো হামলার দৃশ্য প্রচার করেছে এবং নিহতদের স্মরণে জাতীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
হামলার পরদিন শুক্রবার মধ্যরাতে ইরানও পাল্টা জবাব দেয়। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) নেতৃত্বে চালানো এই প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবসহ আশদোদ, হাইফা ও রামাত গান শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন, নিহত হয়েছেন একজন নারী। বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তেল আবিবের কিছু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। পরমাণু প্রকল্প, গাজা যুদ্ধ এবং সিরিয়া-লেবাননে দুই দেশের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আগেই দ্বন্দ্ব জটিল অবস্থায় ছিল। তবে এবার সরাসরি বিমান হামলা ও পাল্টা হামলার মাধ্যমে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া ও তুরস্ক উভয় পক্ষকে ‘সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে আয়াতুল্লাহ খামেনির কড়া বক্তব্যে স্পষ্ট, ইরান এই ঘটনার চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জনসমর্থন নিয়েই সামরিক পদক্ষেপে যাচ্ছে।
তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘোষণার পর জনসমুদ্র দেখা গেছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে “মারক বার ইসরায়েল” (ইসরায়েলের মৃত্যু হোক) স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের সমর্থন প্রকাশ করে বিশাল মানববন্ধন এবং মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনাকে ‘সর্বনাশা যুদ্ধের ইঙ্গিত’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ঘাঁটির উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নজিরবিহীন রূপ নিচ্ছে। পরমাণু শক্তিধর দুই শক্তির সরাসরি সংঘর্ষ বিশ্ব রাজনীতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সুতরাং বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এখনই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনা। যুদ্ধ নয়, কূটনীতি হোক সমাধানের পথ।