ক্ষমতার পিপাসু ভাড়াটিয়া রাজনীতি” বিএনপির জন্য হতে পারে ধ্বংসের কারণ

আওয়ামী লীগের পতনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বিএনপি যেন নিজেও ধ্বংসের দিকে না এগোয়—এটাই সময়ের সতর্কবার্তা।

লেখক মোহাম্মদ মাহামুদুল

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন এক বিশেষ সময় পার করছে বিএনপি। মাঠে নেই, সংসদে নেই—তবুও জনগণের একটি বড় অংশ আজও চায় এই দলটি যেন সত্যিকারের বিকল্প হিসেবে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি বিএনপি সে বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে?

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এমন গোষ্ঠীর সঙ্গে ওঠাবসা করছেন, যারা অতীতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ বা সমালোচিত হয়েছে—যেমন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের সাবেক বা বর্তমান দুর্নীতিবাদী অংশ। এই বাস্তবতা শুধু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নয়, সাধারণ মানুষের মনেও উদ্বেগ তৈরি করেছে।

জনগণের চাওয়া: পরিচ্ছন্ন, সাহসী নেতৃত্ব

আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। বিএনপি যদি চায় যে তারা জনগণের আস্থা অর্জন করবে, তবে তাদেরকে স্পষ্ট করে বলতে হবে—তারা কোন ধরণের রাজনীতির পক্ষে, এবং কোন ধরণের গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সঙ্গে আপোষহীন।

যারা আওয়ামী লীগের অবক্ষয়ের সুযোগ নিয়ে বিএনপিতে ঢুকছে, তারা মূলত দলটির আদর্শ নয়, বরং ক্ষমতার গন্ধ অনুসরণ করছে। আর এই “ক্ষমতার পিপাসু ভাড়াটিয়া রাজনীতি” বিএনপির জন্য হতে পারে ধ্বংসের কারণ।

 

রাজনৈতিক পুনর্বাসন না আত্মসমর্পণ?

যেসব গোষ্ঠী বা ব্যক্তি অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি কিংবা সহিংসতায় লিপ্ত ছিল, তাদের হঠাৎ করে বিএনপির রাজনীতিতে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেলে, সাধারণ ভোটারের মনে ন্যায্য প্রশ্ন জাগে—এই দল কি সত্যিই পরিবর্তনের প্রতীক? নাকি কেবলই পুরনো চক্রের পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম?

বিএনপির জন্য এটা নৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই আত্মঘাতী। কারণ এটি তাদের স্বতন্ত্র অবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলে এবং বিরোধী পক্ষকে সুযোগ করে দেয় বলার—”সবাই এক, শুধু রং বদলেছে।

ক্ষমতার ধ্বংসাবশেষে বসে রাজনীতি হয় না

আওয়ামী লীগ আজ সংকটে—দলীয় শৃঙ্খলা, জনআস্থা ও নেতৃত্বে প্রশ্নবিদ্ধতা বিরাজ করছে। কিন্তু বিএনপির উচিত হবে না, এই ডুবন্ত জাহাজের ভাঙা কাঠ নিয়ে নতুন নৌকা তৈরির চেষ্টা করা। কারণ, সেই কাঠে আগুন লেগে থাকলে তাতে নিজেদেরও পুড়তে সময় লাগবে না।

 

 সতর্ক হোন, সংহত হোন

বিএনপির সামনে এখনো সময় আছে। তারা চাইলে নিজেদের পরিচ্ছন্ন, আদর্শিক ও গণমুখী একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে তখনই, যখন তারা আপোষহীনভাবে দূরে থাকবে নিষিদ্ধ, বিতর্কিত বা সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর কাছ থেকে।

আওয়ামী লীগের পতনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বিএনপি যেন নিজেও ধ্বংসের দিকে না এগোয়—এটাই সময়ের সতর্কবার্তা।

লেখক, সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান।