
মোহাম্মদ মাহামুদুল।
“সাংবাদিক জাতির বিবেক”—এই বাক্যটি বহুদিন ধরেই প্রচলিত। সাংবাদিকরা সমাজের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অবিচার ও অমানবিকতা তুলে ধরেন তাঁদের কলমে ও প্রতিবেদনে। তাঁরা সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন। এজন্যই তাঁদের ‘জাতির বিবেক’ বলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই জাতির বিবেকের আসন কি শুধুমাত্র সাংবাদিকদের জন্যই নির্ধারিত? একজন মুসলিম হিসেবে বা একটি মূল্যবোধভিত্তিক সমাজের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, ‘আলেম’ অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞানী ও নৈতিক পথপ্রদর্শকরাও জাতির বিবেক হওয়ার এক অগ্রগণ্য দাবি রাখেন।
আলেমদের ভূমিকা
আলেমদের কাজ শুধু ধর্মীয় বিধিবিধান শেখানো নয়; বরং তাঁরা জাতির নৈতিক দিকনির্দেশক। আলেমরা সমাজকে সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায়, সুবিচার ও আদর্শিক জীবনের শিক্ষা দেন। তাঁরা মানুষকে আল্লাহভীতি ও মানবিকতার পথে আহ্বান করেন। নৈতিক সঙ্কটময় সময়ে আলেমরাই মানুষের অন্তরে জাগিয়ে তোলেন তওবা, আত্মশুদ্ধি এবং আত্মজিজ্ঞাসার আগুন।
তাঁদের বক্তব্য, ওয়াজ, দাওয়াত—এসবের মাধ্যমে একেকটি মন বদলে যায়, পরিবার বদলে যায়, এমনকি গোটা সমাজেও পরিবর্তন আসে। আলেমরা কাজ করেন দৃশ্যমান সংবাদ শিরোনামের বাইরে, মানুষের অন্তরের ভেতরে।
সাংবাদিকদের অবদান
সাংবাদিকদের অস্বীকার করা যাবে না। তারা ন্যায়ের পক্ষে সাহসী কণ্ঠস্বর। দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরা, সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা—এসবই সাংবাদিকদের দায়িত্ব।
তবে বাস্তবতা হলো, অনেক সময় সাংবাদিকতা হয়ে পড়ে বাণিজ্যিক ও পক্ষপাতদুষ্ট। তখন সত্য আড়াল হয়ে যায়, আর সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে একশ্রেণির মানুষের হাতিয়ার। আবার অন্যদিকে, অনেক আলেমও রাজনৈতিক প্রভাব বা অর্থনৈতিক লোভে নিজেদের দায়িত্ব ভুলে যান।
জাতির প্রকৃত বিবেক—একটি ভারসাম্যের ভাবনা
আসলে, জাতির বিবেক কোনো একক শ্রেণির নয়। সাংবাদিকরা যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকেন, তারা বিবেকের ভূমিকা রাখবেন। আলেমরা যদি খাঁটি ইখলাস ও সঠিক জ্ঞানের সাথে সমাজ গঠনে কাজ করেন, তারাও বিবেক হবেন। তবে একজন মানুষকে প্রকৃত জাতির বিবেক হতে হলে তার মধ্যে থাকতে হবে সত্যনিষ্ঠা, নৈতিকতা, সাহস এবং আত্মত্যাগের মনোভাব।
পরসমাচার,সাংবাদিকদের মতো আলেমরাও জাতির বিবেক—এ দাবি অমূলক নয়। বরং আজকের সমাজে আলেমদের নৈতিক ভূমিকা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ প্রযুক্তি আর ভোগবাদের দুনিয়ায় মানুষ হারাচ্ছে মূল্যবোধ। এই সময়ে আলেমদের কণ্ঠ হতে পারে অন্ধকারে এক আলোর দিশা।