
মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর কাকরাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গিয়ে পানির বোতলের হামলার শিকার হন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহভাজন তালিকায় উঠে এসেছে এক যুবকের নাম, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন তাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
১৪ মে (বুধবার) রাতে কাকরাইল মসজিদের সামনে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে বোঝাতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি কথা বলার সময় হঠাৎ একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল উড়ে এসে তার মাথার কাছে পড়ে। এতে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে নিরাপদে সরে যেতে সহায়তা করেন। এ ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র বিশ্লেষণ করে এক যুবককে সন্দেহ করা হচ্ছে যিনি আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন এবং আচরণে উত্তেজিত মনে হচ্ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন,“ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এক যুবকের বিরুদ্ধে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাকে শনাক্তের কাজ চলছে এবং দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”এ বিষয়ে ডিএমপির ডিবি (দক্ষিণ) এর যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন,“আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বিশ্লেষণ চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
সম্প্রতি চাকরিতে বয়সসীমা পুনর্বহালের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার অংশ হিসেবে মাহফুজ আলম সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় সম্পূর্ণ আলোচনাই ভিন্নদিকে মোড় নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে এই আচরণের বিরুদ্ধে। অনেকেই বলছেন,“আন্দোলনের ন্যায্য দাবি থাকলেও এ ধরনের আচরণ আন্দোলনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এটা কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ হতে পারে না।”
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। “আলোচনা-সংলাপই যেকোনো গণতান্ত্রিক দাবির পথ। সেখানে এই ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা উদ্ভট বার্তা দেয়।”এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা ও গতি লক্ষ্য করার মতো। তবে পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্য, শুধুমাত্র এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা নয়—শিক্ষা আন্দোলনের স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক অপপ্রয়োগ থেকে মুক্ত রাখাও এখন সময়ের দাবি।
“শিক্ষার্থীদের দাবি থাকতে পারে, তবে যদি এমন আচরণ সত্য প্রমাণিত হয়, তা হলে তা শুধু অপরাধ নয়, বরং শিক্ষার পরিবেশের ওপরও আঘাত।”যে বা যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অপ্রত্যাশিত আচরণকারীদের চিহ্নিত করে দায়িত্বশীল নেতৃত্বকে সামনে আনার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আন্দোলন যেন ন্যায্যতা হারিয়ে বিশৃঙ্খলায় না পড়ে, সেটি দেখার দায়িত্ব এখন শুধু প্রশাসনের নয়, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব নেতৃত্বেরও।