
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত থেকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এক শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর একটি বাসা থেকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমকে আটক করে। বুধবার (১৪ মে) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি একটি গোপন ‘ভার্চুয়াল গ্রুপ মিটিং’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য নাশকতার পরিকল্পনা করে। ওই মিটিংয়ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম। গোপন তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হয়ে গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম পূর্বেও একটি নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। সম্প্রতি আবারও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে বুড়িচং থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত হন রেজাউল করিম। গোয়েন্দা নজরদারিতে তার সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসায় তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এর আগেও একই অভিযোগে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিমকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এতে ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের ভেতরে একটি গোপন গোষ্ঠী সম্ভাব্যভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির পরিকল্পনায় সক্রিয় রয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ধরনের অনলাইন ভিত্তিক ষড়যন্ত্র ও নাশকতা পরিকল্পনা মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে।
ঘটনার পর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। তবে একাধিক সূত্র বলছে, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষা করছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারবিরোধী চক্র ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক বৈঠক ও ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। তাই অনলাইন কার্যক্রমে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বৈঠকে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুসারে, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বরং সুপরিকল্পিত চক্রের অংশ। এখন দেখার বিষয়, দলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা এমন “দ্বৈত চরিত্রধারী” নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নিজে কী ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।