ঈমানের গুরুত্ব ও রাসূল প্রেমে উদ্বুদ্ধ বয়ান—বুড়িচংয়ের কালিকাকাপু জামে মসজিদে মুফতি ছফিউদ্দিন ফয়েজী

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
আজ শুক্রবার কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের কালিকাকাপু বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত পবিত্র জুমার নামাজে বিশেষ খুতবা প্রদান করেন দেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফতি ছফিউদ্দিন ফয়েজী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সন্তান এবং চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসার এম.এ (হাদিস ও ফিকহ) পাশ করে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে। আজকের খুতবায় তাঁর কণ্ঠে যেন ঈমানের তেজ, তাওহিদের ঘোষণা এবং রাসূল প্রেমের সুরই ভেসে উঠল।

খুতবার মূল প্রতিপাদ্য: ঈমান—একটি জীবনের মূলভিত্তি

মুফতি ফয়েজী সাহেব তাঁর খুতবার শুরুতেই তেলাওয়াত করেন পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত, যেখানে ঈমানদারদের মর্যাদা, আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস এবং রাসূলের প্রতি ভালবাসা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন,

“এই দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। চিরস্থায়ী জীবন হলো আখিরাত। আর সেই পরকালের সফলতার চাবিকাঠি হলো ঈমান। ঈমান ছাড়া কোনো আমল কবুল হয় না, ঈমান ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না।”

তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন,

“আমরা যদি ঈমানকে জীবনের মূলভিত্তি না বানাই, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত—দুই জগতেই আমরা ব্যর্থ হবো। ঈমান শুধু মুখের কথা নয়, বরং হৃদয়ের গভীর বিশ্বাস ও আমলের প্রতিফলন।”

রাসূল প্রেমের আহ্বান: “যে রাসূলকে ভালোবাসে না, সে প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না”

খুতবার দ্বিতীয় অংশে মুফতি ফয়েজী আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন,

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহর সর্বশেষ নবী, রহমাতুল্লিল আলামিন। তিনি আমাদের জন্য নিজের পরিবার, সন্তান, জীবন, এমনকি নিজের নফসকেও উৎসর্গ করেছেন। আজ আমাদের উচিত—তাঁর প্রতি এমন ভালোবাসা পোষণ করা, যা নিজের প্রাণ থেকেও বেশি।”

তিনি আরও বলেন,

“আমাদের জীবনে যদি রাসূলের সুন্নত প্রবেশ না করে, তাহলে আমাদের জীবন অন্ধকার। রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করলেই আমাদের ঈমান পূর্ণতা পায়।”

মুসল্লিদের প্রতিক্রিয়া: চোখে জল, মনে গভীর ভাবনা

আজকের খুতবা শেষে দেখা গেছে অনেক মুসল্লির চোখে অশ্রু, হৃদয়ে প্রার্থনার গতি। উপস্থিত মুসল্লিরা জানান,

“আজকের খুতবাটি আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। আমরা বুঝেছি, ঈমান শুধু একটি শব্দ নয়—এটি আমাদের অস্তিত্বের শিকড়। আর রাসূলের প্রেম ছাড়া ঈমান পূর্ণতা পায় না।”

স্থানীয় একজন প্রবীণ মুসল্লি বলেন,

“মুফতি সাহেব যেভাবে কোরআন, হাদিস ও বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে বয়ান করেছেন, তা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। এই ধরনের খুতবা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে দিক নির্দেশনা দিতে পারে।”

খুতবার প্রভাব: সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের পথে আহ্বান

মুফতি ফয়েজী তাঁর খুতবার শেষ অংশে বর্তমান সময়ের নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, এবং মুসলিম উম্মাহর বিভ্রান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,

“আমরা যদি কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে এই সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, মাদক, দুর্নীতি ও অশ্লীলতা দূর হয়ে যাবে।”

তিনি তরুণ সমাজকে প্রযুক্তির অপব্যবহার না করে ইসলামি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং অভিভাবকদের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।