কোটা নিয়ে আন্দোলন করে আবার কোটা, সমালোচনার ঝড়

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

দেশজুড়ে নানা ঘটনা, আলোচনা-সমালোচনা, শঙ্কা ও নাভিশ্বাসের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল। বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন, ছাত্র আন্দোলন, গণভ্যুত্থান, স্বৈরাচারের পতন ও নতুন সরকার গঠন—এই সবই ঘটেছে। তবে, জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়া এবং তাতে সরকারের দমন-নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের ফলস্বরূপ, শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন এবং বহু প্রাণের বিনিময়ে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কিন্তু এত রক্ত, এত প্রাণের পর, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হওয়ার বিষয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কোটা সংস্কারের পক্ষে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তাদের মতে, যে কোটার বিরুদ্ধে এত কিছু ঘটেছিল, সেই কোটা আবার কেন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে? সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের সক্ষম সদস্যদের সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি তাদের জন্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম সম্প্রতি জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারের সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। আহতরা তিনটি মেডিকেল ক্যাটাগরি—এ, বি, সি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন এবং গুরুতর আহতরা আজীবন চিকিৎসা সুবিধা সহ মাসিক ভাতা পাবেন। এছাড়া, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫% কোটা সংরক্ষিত থাকবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম মুখ, মহিউদ্দিন রনি, ফেসবুকে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোটাকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের শহীদরা প্রাণ দেননি। আমাদের এক দাবিই ছিল—’কোটা নয়, মেধা’।” তিনি আরও বলেন, কোটা ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন শহীদদের ত্যাগকে অসম্মান করবে এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।

এদিকে, গত ফেব্রুয়ারিতে কোটা বিষয়ক বিতর্কের সময় সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই শহীদ পরিবারদের চাকরিতে কোটা কোনও নতুন ব্যবস্থা নয়, এটি শুধু তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়ার একটি উদ্যোগ।”

কিন্তু, ছাত্রঅধিকার পরিষদ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুরোধা সংগঠন, কোটা ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনকে “বৈষম্য পুনর্বহাল” হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়, এবং দাবি জানিয়েছে সরকারি সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।

শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে—যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল, সে বৈষম্য আর ফিরিয়ে আনা উচিত নয়। ছাত্রঅধিকার পরিষদের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হয়, তবে তারা আরও তীব্র আন্দোলন শুরু করবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে কোটা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।