মাইজভান্ডার মহান ২৭ মাঘ ৫দিনব্যাপী খোশরোজ শরীফের ২য় দিনে লাখো ভক্ত জনতার ঢল।

শাহজাহান বাশার  এএনবি টুয়েন্টিফোর ডটনেট রিপোর্টার

খোদাভীরুতা অর্জন করতে হলে আল্লাহর নেক বান্দাদের সোহবতে যেতে হবে -ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মা.)।

 

 

মাইজভান্ডার দরবার শরীফের অন্যতম প্রাণপুরুষ হুজুর গাউছুল ওয়ারা শায়খুল ইসলাম হযরত শাহ্সূফী আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর (ক.) ৮৮তম খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে ৬-১০ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ৫দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি চলছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে।

 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) খোশরোজ শরীফের সমাপনী দিবসের আখেরি মুনাজাত একইসাথে মাইজভান্ডার রহমানিয়া মইনীয়া দরসে নেজামী আলিম মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার সালানা জলসা সম্পন্ন হবে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) খোশরোজ শরীফের উদ্বোধনী দিবসের কর্মসূচির মধ্যে বাদ ফজর খতমে কুরআন, খতমে খাজেগান, খতমে গাউছিয়া মাইজভান্ডারীয়া আদায়ের মাধ্যমে বাদ যোহর থেকে খতমে বুখারী, বাদে আছর তাসাউফ ভিত্তিক আলোচনা ও দোয়া মুনাজাতের সাথে ২৭ শে মাঘ খোশরোজ শরীফ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ৫দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দিন বাদ মাগরিব থেকে ওয়াজ মাহফিল, হালকায়ে জিকির ও সেমা মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খোশরোজ শরীফের প্রতিদিন এবং সমাপনী দিবসে ছদারত ও আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া মনজিলের সাজ্জাদানশীন হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভান্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।

 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারী) লাখো ভক্ত জনতা ও মুসল্লীকে সাথে নিয়ে তিনি পবিত্র জুমার নামাজের খোৎবা ও ইমামতি করেন। এ সময় তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্যবাদী তথা আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে থাকার আদেশ করেছেন। আর এটি খোদাভীরতা অর্জন করার সহজতম উপায়। তাছাড়া যেকোনো বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোনো কিছু শেখার এবং গ্রহণ করার এটি একরকম স্বীকৃত এবং পরীক্ষিত পদ্ধতি। তিনি আরো বলেন, কারো কাছ থেকে কিছু হাসিল করতে হলে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে থাক, তাঁর খেদমতে সংযোগ বৃদ্ধি করা আবশ্যক।

 

তবেই তার কাছ থেকে কিছু নিতে পারবে। তাসাউফে ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সোহবতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানুষের হেদায়েতের জন্য কিতাব ও রিজাল (আল্লাহর নির্বাচিত ও প্রিয় বান্দাদের) পাঠিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই যুগে যুগে মানুষ আল্লাহর প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ হয়েছেন।

 

বিএসপি চেয়ারম্যান বলেন, আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের সোহবত থেকে দূরে থাকলে সত্যিকার অর্থে তাক্বওয়া বা খোদাভীরতা অর্জন অনেকাংশে অসম্ভব বলা যায়। এই খোদাভীরুতা না থাকায় আজকে যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন হচ্ছে। উশৃংখলতা মারামারি হানাহানি লুটপাট ভাঙচুর মব জাস্টিসের মত ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারী বলেন, এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ কে আলোকিত সমাজে রূপদান করতে হলে আবাল বৃদ্ধ বণিতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই আল্লাহর ওলিদের সোহবত এখতিয়ার করতে হবে। খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও মইনীয়া যুব ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন খতমে কুরআন, খতমে গাউছিয়া, খতমে খাজেগান, রওজায় গিলাফ চড়ানো, ফ্রি চিকিৎসাসেবা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, হুজুর কেবলার দেশ বিদেশের দুর্লভ আলোকচিত্র চিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনী, মাদকের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খোশরোজ শরীফে অংশগ্রহণে দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্ত জনতার উপস্থিতিতে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠছে। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় পুরো মাইজভান্ডার দরবার শরীফকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। খোশরোজ শরীফে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি আন্জুমানের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবেন। সার্বক্ষনিক মনিটরিংয়ের জন্য দরবার শরীফের নায়েবে মুন্তাজেম শাহ্জাদা সৈয়দ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, শাহ্জাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানীর নেতৃত্বে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৫দিনের খোশরোজ শরীফের কর্মসূচি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা ও থানা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। খোশরোজ মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে সালাতু সালাম শেষে দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম উম্মাহ্ ও নিপীড়িত মানবতার মুক্তি কামনায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী। পরে সকলের মাঝে তবারুক পরিবেশন করা হয়।