সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীতে শিক্ষাবোর্ডের লুট শতকোটি টাকা

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার নম্বরপত্র, মূল সনদ তৈরি ও পাঠানোতে এক অর্থবছরেই অতিরিক্ত ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ হিসাবে গত ১০ বছরে তাঁদের পকেটে ঢুকেছে অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি।

 

বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই এই টাকার ভাগ পান। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মূল সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীর কাগজপত্রে এবং অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সম্মানীর ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের তোয়াক্কা করা না হলেও বোর্ডগুলোর দাবি, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন নিয়েই সম্মানী দেওয়া হচ্ছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ   বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

জানা যায়, প্রতিবছর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নম্বরপত্র ও মূল সনদের জন্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ১৫০ টাকা নেয়। এর মধ্যে মূল সনদের জন্য ১০০ ও নম্বরপত্রের জন্য ৫০ টাকা। তবে এসএসসি-এইচএসসির সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মূল সনদের জন্য ১২০ ও নম্বরপত্রের জন্য ৮০ টাকা নেয় । মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নেয় যথাক্রমে ১০০ ও ৩৫ টাকা।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১টি বোর্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে এসএসসি ও এইচএসসির প্রতি মূল সনদ লেখা, যাচাই, স্বাক্ষর ও পাঠানো বাবদ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী ৬ টাকা এবং এসএসসির প্রতি নম্বরপত্র লেখা, যাচাই, স্বাক্ষর ও পাঠানো বাবদ সাড়ে ১২ টাকা ও এইচএসসির নম্বরপত্র প্রতি ২২ টাকা সম্মানী নির্ধারণ করা হয়।

তবে এই হার মানছে না বোর্ডগুলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই পরীক্ষার মূল সনদপ্রতি সম্মানী নিয়েছেন ৬৪ টাকা, যা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারের চেয়ে সাড়ে ১০ গুণের বেশি। এসএসসির নম্বরপত্রপ্রতি নিয়েছেন ২২ টাকা (নির্ধারিত হারের প্রায় দ্বিগুণ) এবং এইচএসসির নম্বরপত্রপ্রতি ৩৭ টাকা (নির্ধারিত হারের দেড় গুণের বেশি)।

এই হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১২ কোটি ১০ লাখ ১৪ হাজার ১৪০ টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৯টি সাধারণ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে মূল সনদের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সম্মানীর অতিরিক্ত ৯ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ১১৯ টাকা এবং নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার ২১ টাকা নিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, মূল সনদ ও নম্বরপত্র তৈরির সম্মানীর টাকা বোর্ডের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই পান। বছর শেষে এ বাবদ একজন কর্মচারী-কর্মকর্তা ন্যূনতম ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা পান। এ জন্য বোর্ডের চাকরি লোভনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল সনদ ও নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবছর অতিরিক্ত সম্মানী নেন ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত ১০ বছরে তাঁরা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি নিয়েছেন। লোপাট না হলে যা থাকত বোর্ডের তহবিলে।

২০২২-৩ অর্থবছরের সম্মানীর কাগজপত্রে দেখা গেছে, মূল সনদপত্রের ক্ষেত্রে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত সম্মানী নিয়েছেন ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩১ টাকা, রাজশাহী বোর্ডে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩৬ টাকা, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪২ হাজার ১৫০ টাকা, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২৯ টাকা, সিলেট বোর্ডে ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৮ টাকা, যশোর বোর্ডে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৯২২ টাকা, বরিশাল বোর্ডে ৭০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬৬ টাকা, কুমিল্লা বোর্ডে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬১৭ টাকা ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৫২০ টাকা।

একই অর্থবছরে নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত ৩০ লাখ ৫৩ টাকা, রাজশাহী বোর্ডের ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৩ টাকা, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৮ টাকা, দিনাজপুর বোর্ডের ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪১৫ টাকা, সিলেট বোর্ডের ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৬ টাকা, যশোর বোর্ডের ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ১২৪ টাকা, বরিশাল বোর্ডের ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৬ টাকা, কুমিল্লা বোর্ডের ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৯ টাকা এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মানীর অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৭ টাকা নেন।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মূল সনদ ও নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সম্মানীর চেয়ে বেশি অর্থ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইলে ফোন করা হলে অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির অনুমোদন ও বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁরা মূল সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানী নির্ধারণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী সবাই সম্মানী পাচ্ছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সম্মানীর অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া অবশ্যই বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনার এবং তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ১৪ অক্টোবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্দিষ্ট সম্মানীর বাইরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলো ১৯৬১ সালের দুটি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী চলছে। অর্ডিন্যান্সে অনেক ফাঁকফোকর ও অস্পষ্টতা থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছেন বোর্ডগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি বলেন, নানামুখী তৎপরতার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২৩ আটকে গেছে। আইনটি হলে বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহির আওতায় আসবেন এবং বোর্ডে আর্থিক শৃঙ্খলা আসবে।

আজকের পত্রিকা

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net