রাজধানী ঢাকায় চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ মহাসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগসহ একদফা দাবিতে আলটিমেটাম দেওয়া হবে। এতে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করবে। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে গত কয়েকদিনে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেয় বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির এ বৈঠকের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুরের রোডমার্চ কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যেও আগামীতে কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের জন্য দেশের মানুষ রাস্তায় লড়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে যে ডাক আসবে, সেখানে সবাইকে রাস্তায় থাকতে হবে।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলাকালে কোনো কর্মসূচি রাখছে না বিএনপি। এ সময়ে দলটির নেতারা বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করবেন বলে জানান তারা।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, এবারের কর্মসূচিকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি থাকতে পারে। এ সময়ে সমাবেশ, মহাসমাবেশ, পদযাত্রা ও রোডমার্চের মতো কর্মসূচিতে দলীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে চায় দলটি। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতেও কয়েকটি কর্মসূচি থাকবে। ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজার জন্য পাঁচদিন বিরতি থাকবে।
গত সোমবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকসূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করতে চায় দলটি। এ সময়ে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় করার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি।
দলের একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে বিএনপি। তার আগে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। এই সমাবেশ থেকে ঢাকামুখী রোডমার্চ, গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও, অবরোধ, এমনকি প্রয়োজনে হরতাল দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে দুর্গাপূজার উৎসব চলাকালে আন্দোলনের কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপূজার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কঠোর কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
দলের কর্মসূচি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা বলেন, মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগের পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অস্থিরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ মাসেই রাজনীতির গতি-প্রকৃতিতে আরও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে, যা সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিক বিবেচনা করে আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পদক্ষেপ, আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যÑ এ সবকিছুর ওপর নির্ভর করে যে কোনো সময় কর্মসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
স্থাীয় কমিটির বৈঠকসূত্র জানায়, বৈঠকে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পর আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। সেখান থেকে সরকারকে পদত্যাগে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে দুর্গাপূজার পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে এ মাসের শেষ সপ্তাহে রাজধানীমুখী রোডমার্চ শুরু হবে। প্রতিদিন ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে রোডমার্চ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসবে। সেখানে জনসভা হবে। এরপর সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ভবন, বিচারাঙ্গন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও হতে পারে। তার পর প্রয়োজনে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। খুব বাধ্য না হলে হরতালের দিকে যেতে চায় না দলটি।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায় করা। এক্ষেত্রে মূল বাধা হচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। জনগণকে সম্পৃক্ত করে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে সরকারকে পদত্যাগ বাধ্য করে এই বাধা দূর করতে চান তারা। সেই পথেই হাঁটছেন তারা।