ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও এর জবাবে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিতে চাইছে আন্তর্জাতিক আদালতটি।
ইসরাইলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের করা হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় একটি নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরাইল। হামাসের ওই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হন। এসময় আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় সশস্ত্র যোদ্ধারা।
এই হামলার জবাবে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, সাত মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় চলমান হামলায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসময় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।
সাক্ষাৎকারে করিম খান বলেছেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের দুই শীর্ষ নেতা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম ওরফে মোহাম্মদ দেইফ, গাজাপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইছে আইসিসি।
ইসরাইলি রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যদি এই পরোয়ানা জারি করা হয় তাহলে তা হবে কোনও মার্কিন মিত্র দেশের শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে আইসিসির প্রথম পদক্ষেপ।
আইসিসির বিচারকদের একটি প্যানেল এখন করিম খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন বিবেচনা করছে।
করিম খান বলেছেন, সিনওয়ার, হানিয়েহ ও মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ধ্বংসসাধন, হত্যা, জিম্মি করা, ধর্ষণ ও বন্দিদের যৌন নির্যাতন।
সিএনএনকে খান বলেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কিব্বুতজিমের বিভিন্ন স্থানে মানুষদের তাদের বাড়ির বেডরুম থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা বিশ্বকে হতবাক করেছিল। মানুষজন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো, যুদ্ধ কৌশল হিসেবে অনাহার সৃষ্টি, মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও সংঘাতে পরিকল্পিতভাবে বেসামরিকদের নিশানা করা।
আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে গত মাসে খবর প্রকাশের পর নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরাইলি সরকার ও সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হবে একটি ঐতিহাসিক আক্রোশ। ইসরায়েলের স্বতন্ত্র বিচার ব্যবস্থা রয়েছে, তা যেকোনো আইন লঙ্ঘনের জোরালো তদন্ত করবে।
নেতানিয়াহুর মন্তব্যের বিষয়ে খান সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। ইসরাইল যদি আইসিসির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে তারা চাইলে আদালতের এখতিয়ার নিয়ে নিজেদের আপত্তি তুলে ধরতে পারে, আদালতের বিচারকদের সামনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। আমি তাদেরকে এমনটি করার পরামর্শ দেব।
আইসিসির সদস্য নয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। তবে আইসিসি মনে করে গাজা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর তাদের বিচারের এখতিয়ারের আওতায় রয়েছে। ২০১৫ সালে ফিলিস্তিনি নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির প্রতি সম্মতি ঘোষণার পর এ এখতিয়ার তৈরি হয়েছে।