(কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে মৃত ব্যক্তির প্রকৃত ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে নিজ নামে জমি খারিজ সম্পাদক করে ৩ একর এর অধিক সম্পত্তি আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগি ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির মালিকানার প্রকৃত দাবিদার মো: ইসমাইল মোল্লা জালিয়াতি করা এনআইডি বাতিল সহ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামে।
দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী গ্রামের ওমর আহমেদ মোল্লা ও সাফিয়া খাতুন দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। ২০১৭ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে ওমর আলী মোল্লা মৃত্যুবরণ করলে একই গ্রামের দক্ষিণ পাড়া খন্দকার বাড়ীর জন্তুর আলীর ছেলে মো: আবু তাহের তাহার নিজ জাতীয় পরিচয়পত্রে (জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৯১৩০০৭১০০৫) জালিয়াতির মাধ্যমে পিতার নাম জন্তুর আলীর স্থলে ওমর আহমেদ মোল্লা ও মাতার নাম সাফিয়া খাতুন উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এর কিছুদিন পরই অভিযুক্ত আবু তাহের সম্পত্তি বিক্রি শুরু করলে মরহুম ওমর আহমেদ মোল্লার প্রকৃত উত্তরসূরি ভাতিজা ইউসুফ মোল্লা ও তার ছেলেরা বিষয়টি টের পেয়ে জমি বিক্রিতে বাধা প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এসব ঘটনায় উভয়পক্ষের কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়া সহ থানা ও আদালতে পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলা দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, আবু তাহেরের প্রকৃত জন্মদাতা পিতা জন্তুর আলী ও মাতা আফিয়া বেগম দম্পতির ঘরে ১৯৭০ সালে শাহজাহান ও আবু তাহের নামে দুই জমজ পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। আবু তাহেরের জমজ ভাই শাহজাহান তার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম জন্তুর আলী ও মাতার নাম আফিয়া বেগম উল্লেখ করলেও আবু তাহের সম্পত্তির লোভে তাহার নিজের নামের সাথে মোল্লা সংযুক্ত করে ১৯৬২ সালের ৪ জুলাই জন্মতারিখ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম হাজী ওমর আহমেদ মোল্লা ও মাতার নাম সাফিয়া খাতুন উল্লেখ করেন। এনআইডি তৈরী হলে ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা দাবি করে মরহুম ওমর আহমেদ মোল্লার সকল সম্পত্তি নিজ কব্জায় নিয়ে নেন এবং গোপনে সম্পত্তি বিক্রি শুরু করেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগিরা বাধা দিতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন বিষয়টি জানলেও আবু তাহেরের ভয়ে কেউই সরাসরি মুখ খুলছেনা বলে জানান ভুক্তভোগিরা।
আবু তাহেরের জমজ ভাই, জন্তুর আলীর ছেলে শাহজাহান বলেন, ‘১৯৭০ সালের ১ এপ্রিল আমরা ২ ভাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একসাথে জমজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করি।’ ভাই আবু তাহেরের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ছাতিয়ানী গ্রামের বাসিন্দা মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, ‘আবু তাহেরের পিতার প্রকৃত নাম জন্তুর আলী, মাতার নাম আফিয়া বেগম। সে ওমর আহমেদ মোল্লার ঔরশজাত কোন সন্তান নয়। ওমর আহমেদ মোল্লা নিঃসন্তান অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ওমর আহমেদ মোল্লা মৃত্যুকালে ৩০০ শতক (৩ একর) এর অধিক সম্পত্তি রেখে গেছেন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিন উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আবু তাহের নিজের নামের শেষে মোল্লা সংযুক্ত করা সহ পিতা-মাতার নাম পরিবর্তন করে কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে তাহা আমার জানা নাই। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগ এনে ওমর আহমেদ মোল্লার ওয়ারিশ ইসমাইল মোল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু তাহেরের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে কলটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে আবু তাহের মোল্লা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইসমাইল মোল্লা নামের অপর এক ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’