হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক আহত ও আশ্রয়হীন মানুষ এই হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।
ইসরায়েল দক্ষিণ গাজা উপত্যকার শহর এবং আশেপাশের এলাকার সমস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বোমা হামলা থেকে বাঁচার আশায় গাজা শহরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল শত শত মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আল জাজিরার টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ফুটেছে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রায় সব জায়গায় মানুষের রক্ত পড়ে আছে। যেগুলো তখনো শুকায়নি।
গাজায় হামাসের সরকারি মিডিয়া অফিস গাজা উপত্যকায় হাসপাতালে হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলছে, বিমান হামলার ফলে শত শত অসুস্থ ও আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং অন্যরা তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হাসপাতালে মৃত্যুর বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা তথ্য পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। এটা ইসরায়েলি বিমান হামলা কিনা তা আমি বলতে পারছি না।
মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। এসব হামলায় বহু মানুষ হতাহতও হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, ওই অঞ্চলে শাসনকারী হামাস চরমপন্থীদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলে হামাসের নৃশংস হামলার পর থেকে গাজায় পানি, জ্বালানি বা খাদ্যশস্যের কোনো সরবরাহ নেই। একই সময়ে, মধ্যস্থতাকারীরা এই অঞ্চলের লক্ষাধিক দুস্থ বেসামরিক নাগরিক, সাহায্য গোষ্ঠী এবং হাসপাতালে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য অচলাবস্থা ভাঙতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই অঞ্চলে সফরে যাচ্ছেন। তিনি এবং অন্যান্য বিশ্বনেতারা যুদ্ধকে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ ও খান ইউনিসে বিমান হামলায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাসমি নাইম বলেছেন, রাফাহতে ২৭ জন এবং খান ইউনিসে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। খান ইউনিসের নাসির হাসপাতালে প্রায় ৫০টি লাশ আনা হয়। রক্তমাখা চাদরে মোড়ানো লাশ সংগ্রহ করতে পরিবারের সদস্যরা সেখানে এসেছিলেন। দেইর আল-বালাহে একটি বিমান হামলায় একটি বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে বসবাসকারী এক পরিবারের নয় সদস্য নিহত হয়েছেন। গাজা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং আশেপাশের একটি বাড়িতে রাখা অন্য পরিবারের তিন সদস্যও হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ এবং ১১ জন নারী ও শিশু রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার আগে কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি।