ড. ইউনূসের প্রতি বর্তমান সরকারের বিরূপ মনোভাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই মির্জা কাদের মনে করেন শেখ হাসিনাকে সরিয়ে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসাতে চায় আমেরিকা। আর এ কারণেই ড. ইউনূসের প্রতি তাদের মনোভাব এমন। সম্প্রতি নিজস্ব ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষারূপ করে নানা সময়ে বক্তব্য দিয়ে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পদ্মা সেতু ইস্যুতে তার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন।
লাইভে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আজকের লাইভে আমি তুলে ধরব শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূসের মধ্যকার ক্ষমতাসংক্রান্ত সংঘাত। সরকার কেন ড. ইউনূসের প্রতি শত্রু ভাবনা পোষণ করছে? বিখ্যাত পত্রিকা ইকোনমিস্টের রিপোর্ট থেকে কিছু গোপন তথ্য প্রকাশ করবো।
ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, ‘‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন অনেক মামলা চলমান। পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ইকোনমিস্ট পত্রিকায় ‘ইউনূসের বিচার’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ইউনূস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের রাজনীতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয়েছে সেই রিপোর্টে। ”
এ সময় তিনি বলেন, ‘জেনে রাখা ভালো— ইকোনমিস্ট সেই পত্রিকা, যার ওপর ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ইমান (আস্থা রেখেছিল) এনেছিল। যে বীভৎস নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ, সেই নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না দিতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকোনমিস্টের ওপর ইমান এনেছিলেন। সেই সময় ইকোনমিস্টের এক সমীক্ষা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচনের আগেই তো ইকোনমিস্টের সমীক্ষায় আওয়ামী লীগের জয় লাভের সম্ভাবনা বেশি ছিল। তাই আওয়ামী ২০১৮-এর নির্বাচনে জিতেছে। ’
‘এদিকে ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী মাঝেমধ্যে নানা নামে ডেকেছে। বিশেষ করে ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে ড. ইউনূসের নতুন নাম দিয়েছেন কুলাঙ্গার। নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা— পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময়ও ড. ইউনূসকে টুস করে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ’
ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, “৮৩ বছর বয়সী ড. ইউনূসের ব্যাপারে অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে। যিনি (ড. ইউনূস) নিজেই ইকোনমিস্টের কাছে বলেছেন— ‘রাজনীতি আমার কম্য নয়’। ২০০৭ সালে সামরিক শাসনের ভয়াবহ সময়কালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য রাজনীতিতে প্রবেশের কথা ভেবেছিলেন, এটিই হতে পারে তার মূল অপরাধ। ’
সেই সময় তিনি (ড. ইউনূস) অনুধাবন করেছিলেন যে, ‘রাজনীতি আমার সঙ্গে যায় না। দীর্ঘ ১৫ বছরে তাকে রাজনীতির এক মুহূর্তের জন্য তার আগ্রহ দেখা যায়নি। এর পরও আওয়ামী লীগের কাছে বা শেখ হাসিনার এত ক্ষোভ কেন?’
“শুনতে হাস্যকর হলেও আমি (ব্যারিস্টার রুমিন) একজনের উক্তি দিয়ে ক্ষোভের কারণ ও ইকোনোমিস্টে বর্ণনা তুলে ধরতে চাই, সেটি হচ্ছে— সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই মির্জা কাদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে সরিয়ে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসাতে চায় আমেরিকা’। আমি জানি না কতটা তারা জেনে বলছেন বা কতটা ধারণা থেকে বলছেন। কিন্তু যেটাই হোক— ড. ইউনূসের ওপর নিপীড়নের এটাই মূল কারণ বলে মনে করেন রুমিন ফারহানা।