আন্দোলন ঠেকাতে নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার কথা বলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের নামে বিএনপি সহিংসতা করলে তার সমুচিত জবাব দিতেও নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তবে এটা তো গেলো নেতাকর্মীদের প্রতি প্রকাশ্য নির্দেশনা। এর বাইরেও অপ্রকাশ্যে বা ইশারা-ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে, পাড়া-মহল্লায় বিএনপির লোকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে। কর্মসূচিতে ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ডে মোটা লাঠিসোটা নিয়ে আসতেও বলছেন কেউ কেউ। এমনকি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যেভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে, সেভাবেই মাঠে থেকে আবারও গণতন্ত্র রক্ষা করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আগামী ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে চূড়ান্ত রূপ দিতে চায় বিএনপি। এজন্য নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। অনেকের ধারণা, বিএনপি সেদিন বসে পড়বে ঢাকায়। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও আছে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবেন।
বিএনপির এই কর্মসূচির জবাবে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশ সফল করতে বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে আওয়ামী লীগ। এটি ছিল মূলত ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির প্রস্তুতি সভা। এই সভা থেকে নেতৃবৃন্দ বিএনপির কর্মসূচির জবাবে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার করেন। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবার আর ছাড় দেবো না। গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের আসল শক্তি বিএনপি। এদের পরাজিত করতে হবে। একদিন-দুদিনের জন্য নয়, তাদের সম্পূর্ণরূপে মোকাবিলা করে সুসংহত বিজয় চাই। দুর্নীতিবাজ সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তির অস্তিত্ব বাংলার মাটি থেকে মুছে ফেলতে হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে সন্ত্রাসী ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল, এই নগরীর মানুষদের অনিরাপদে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ২৮ তারিখ সকাল থেকে পাহারা বসাতে হবে। যাতে দুষ্কৃতকারী কোনো ধরনের অপকর্ম করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘সবশেষ বলতে চাই, কিছু কথা থাকে জাহেরে। আর কিছু কথা থাকে বাতেনে। জাহেরের কথা এখানে আলাপ হচ্ছে। বাতেনের কথা বলা লাগবে, না আপনারা বুঝেন? বুঝেন? বুঝতে পারছেন তো? জেয়ছা কুকুর তেয়ছা মুগুর দিতে হবে।’
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ’২৮ অক্টোবর এমন প্রস্তুতি নেবো, তাদের এমন শিক্ষা দিতে হবে, আর যাতে কর্মসূচি দিতে না পারে।’
ঢাকা ও আশাপাশের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এলাকায় বিএনপি তাণ্ডব করার জন্য লাখ লাখ মানুষ নিয়ে এসেছে ঢাকার বাইরে থেকে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সবাই মিলে প্রশাসনের পাশাপাশি আপনারা ঢাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, ব্যবস্থা নেবেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘২৮ তারিখ আমাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। আমি মেয়র হিসেবে নয়, আপনাদের সহকর্মী হিসেবে সেদিন আপনাদের সঙ্গে থাকবো। এই মুহূর্তে ২৮ অক্টোবর (২০০৬ সালের) লগি-বৈঠার আন্দোলনের কথা আপনাদের খেয়াল আছে। সেদিন আপনারা যেভাবে গণতন্ত্র রক্ষা করেছেন, ইনশাআল্লাহ আগামী ২৮ অক্টোবর মাঠে থেকে আবার গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন।’
সভাপতির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের মোটা মোটা লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নৌকা একটু মোটা লাঠি দিয়ে ধরবেন। বড় ব্যানার আনা যাবে না, কিন্তু প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন থাকবে। তাতে মোটা মোটা লাঠি থাকবে। দুনিয়া পাল্টেছে, আমাদেরও পাল্টাতে হবে ভাইয়েরা।’
প্রতিনিধি সভায় আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান তরুণ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।