বিশ্ব এইডস দিবস আজ। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর এ দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব এইডস দিবসে এবছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত করা হয়েছে “কমিনিউটির আমন্ত্রণ-এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ”।১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়।
বিশ্ব এইডস দিবস’ উপলক্ষে আজ ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাষ্ট্রপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পৃথক পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন,এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সহজলভ্য ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান।বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব এইডস দিবস-২০২৩ উদযাপনের উদ্যোগকে রাষ্ট্রপতি স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, কার্যকর এইডসের কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার না হলেও বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ রোগের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং আমৃত্যু এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। তাই এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সহজলভ্য এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এ প্রত্যাশা করেন।
সরকার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে এইডস আক্রান্তদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও এইডস প্রতিরোধে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এইডস নির্মূল করতে হলে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা এবং গণমাধ্যমসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) এইচআইভি/এইডস বিষয়ক লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ হতে এইডস রোগটি নির্মূল করার জন্য জাতিসংঘের নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা এইডস নির্মূল করতে সক্ষম হবো। আমরা প্রতিটি এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ফলে সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে এইচআইভি সনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনামূলো এইডস এর চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।’ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার পাশ্ববর্তী দেশ গুলোর তুলনায় অনেক নিচে উল্লেখ করে এ হার শূন্যে নামিয়ে আনতে এবং এইডস আক্রান্তদের প্রতি সকল বৈষম্য রোধ করে সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থসমূহের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ।
তিনি বলেন, “সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে ‘রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।” এসময় তিনি ‘বিশ্ব এইডস দিবস-২০২৩’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জাতিসংঘের এসটিডি/এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএন এইডসের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার মানুষ নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে। আক্রান্ত ৩৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের নিচে, যার ২০ ভাগই নারী।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৮ মিলিয়নেরও বেশি। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক লোক ৩৬.৫ মিলিয়ন। মোট আক্রান্তের ১৯ মিলিয়ন নারী এবং ১.৯ মিলিয়ন শিশু। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৭ হাজার ৫০০ জন। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট শনাক্ত রোগীর বড় একটি অংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। সবকিছু বিবেচনায় এইচআইভির সংক্রমণ রুখতে দেশের বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাণঘাতী এই রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে তেমনি নাগরিকদের মধ্যেও বাড়াতে হবে সচেতনতা। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার উচ্চঝুঁকির দেশ। তাদের সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের নানারকম যোগাযোগ আছে। তাই জনগোষ্ঠী সচেতন না হলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়।