আজ বৃহস্পতিবার,১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। প্রিয় নবীর আগমন ও তিরোধান দিবস। তিনি দুনিয়াতে আগমন করেন বিশ্বকে আলোকিত করে।আর এই নশ্বর দুনিয়া থেকে বিদায় নেন সুমহান আদর্শ, সত্য – সুন্দর ও শান্তির অমিয় নিদর্শন রেখে। যাকে আমরা জানি এবং বুঝি দুইটি বস্তু এক. পবিত্র কোরআন,দুই.সুন্নাহ বা হাদিস। এ’দুয়ের সমন্বয়ে চলাতে সব সমস্যার সমাধান।আসুন জেনে নেই, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গেলেন,
কীভাবে কথা বলতে হবে, কীভাবে চলতে হবে, স্বামী হিসেবে, পিতা হিসেবে, বন্ধু হিসেবে এমনকি আত্মীয় ও প্রতিবেশী হিসেবে কী করণীয় তার আদর্শ নমুনা খুঁজে পাই আমরা প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন দিবস ১২ রবিউল আউয়াল (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা:) রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বাণী ও মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন একজন নবীপ্রেমিক মাত্রই জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। প্রিয় নবীর আকার-আকৃতি সম্পর্কে অনেক সাহাবি (রা.) থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ী হিসেবে, রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তিনি রেখে গেছেন সর্বোত্কৃষ্ট উদাহরণ। সর্বক্ষেত্রে শোভন আচরণের প্রতীক ছিলেন তিনি। হযরত মুহম্মদ (সা.) কে জীবনের সবক্ষেত্রে অনুসরণ মুমিনদের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ এর মাধ্যমে নবীপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।
হযরত মুহম্মদ (সা.) কে অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা সম্ভব হয়। ব্যক্তিজীবনে হযরত মুহম্মদ (সা.) কেমন ছিলেন তার চিত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন হাদিসে।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) তোমাদের মতো দ্রুত কথা বলতেন না।
তিনি এমনভাবে কথা বলতেন যে, কেউ তা (শব্দ সংখ্যা) গণনা করতে চাইলে সহজেই গণনা করতে পারত (বোখারি ও মুসলিম থেকে মিশকাতে)।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ দিয়ে কখনো অশ্লীল কথা, অভিশাপ বাক্য ও গালির শব্দ বের হয়নি। অসন্তোষের সময় তিনি বলতেন, তার কী হয়েছে, তার চেহারা ধূলিমলিন হোক (বোখারি থেকে মিশকাতে)।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) আলুথালু চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে দেখে বললেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি নিজেকে কুশ্রী বানায় কেন? অতঃপর তিনি হাতের ইশারায় তার চুল ছেঁটে পরিপাটি করতে বললেন (তাবারানির আল-মুজামুস সগির)।
আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর চাইতে অধিক মুচকি হাসিদাতা আর কাউকে দেখিনি (তিরমিজি থেকে মিশকাতে)।
হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মেজাজে রুক্ষতাও ছিল না এবং তিনি এতটা উচ্ছলও ছিলেন না যে, সামান্য কথাবার্তায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়বেন। বরং এ ব্যাপারে তার কর্মপন্থা ছিল অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কখনো হযরত মুহম্মদ (সা.) কে অট্টহাস্য করতে দেখিনি যে, তাঁর আলজিভ দেখা যায়। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন (বোখারি থেকে মিশকাতে)।
হযরত আলী (রা.) তাঁর আকৃতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না, একেবারে বেঁটেও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন লোকদের মধ্যে মধ্যম আকৃতির।
তাঁর মাথার চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল।
তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তাঁর চেহারা একেবারে গোল ছিল না; বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদা সংমিশ্রিত।
চক্ষুর বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা লম্বা। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। গোটা শরীর ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বক্ষ হতে নাভি পর্যন্ত লম্বা ছিল।
হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু ছিল মাংসে পরিপূর্ণ। যখন তিনি হাঁটতেন তখন পা পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উচ্চ স্থান হতে নিচের দিকে নামছেন।
যখন তিনি কোনোদিকে তাকাতেন তখন ঘাড় পূর্ণ ফিরিয়ে তাকাতেন। তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুওত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। বস্তুত তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যিন (শেষ নবী)।
তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দাতা, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্মীয় লেখক, অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।