বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলমের জবানবন্দী গ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার নবম (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে জবানবন্দী দেন মামলার বাদি।
অন্য দিকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) এক কর্মকর্তা ও কানাডিয়ান রয়েল পুলিশের দুই সদস্যকে সাক্ষ্য হিসেবে হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষে সমন ইস্যুর আবেদন করা হয়েছে। তাদের সাক্ষী হিসেবে হাজির হতে সমন ইস্যু করা হবে কি না সে বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
এ দিকে মামলার বাদি এজাহার দেখে দেখে জবানবন্দী দিচ্ছেন অভিযোগ করে তা বন্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সেই আবেদন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে শুরুতেই সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আইনজীবীরা আদালতে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আবেদন শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে। উচ্চ আদালতে এটা নিষ্পত্তির আগে সাক্ষ্য গ্রহণ ঠিক হবে না। তবে আদালত সেই আবেদন নামঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এজলাস কক্ষে হট্টগোল করেন। পরে মামলার বাদি দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম এ দিন তার জবানবন্দী শেষ করেন। এরপর গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী জেরা শেষ করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরার জন্য সময় আবেদন করা হয়। আদালত খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের জেরার জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জাকির হোসেন ভূঁইয়া, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, জিয়া উদ্দিন জিয়া প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলা চলাকালীন কানাডাতে এবং এফবিআই আমেরিকা এটার তদন্ত করেছিল। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় সেখানকার অ্যাটর্নি জেনারেল ওটার দায়িত্বে ছিলেন। সে ক্ষেত্রে উনি একটা দরখাস্ত দিয়েছিলেন আদালতের কাছে যে, উনাদের কোর্ট যেন সমন ইস্যু করে, উনারা এখানে সাক্ষ্য দেবেন এবং সেই কাগজগুলো জমা দেবেন। যেগুলো উনারা কানাডিয়ান আদালতে জমা দিয়েছেন। সেই আবেদনটা আজ দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আদেশের জন্য আদালত ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
অপর দিকে আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো: শফিউর রহমান মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এর আগে গত ২৩ মে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ওই দিন এ মামলার বাদির আংশিক জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। অন্য দিকে নাইকো দুর্নীতি মামলার এজাহার দেখে বাদির সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ও মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। বিচারপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মাদ শওকত আলী চৌধুরীর অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া পক্ষে গত সপ্তাহে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টে এ আবেদন করেন।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট এ মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে বিচারিক আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণে বাধা নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন।