
নিজস্ব প্রতিবেদক:মো: সেলিম রানা সৌদি প্রবাসী
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের এক বড় অংশ বর্তমানে ভয়াবহ প্রতারণা ও মানবেতর অবস্থার মধ্যে দিন পার করছেন। বিশেষ করে ‘সাপ্লাই ভিসা’ নামক এক ভিসা জালিয়াতির মাধ্যমে বহু শ্রমিক প্রলোভনে ফেলে বিদেশে নিয়ে তাদের বন্দি করে রাখা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের একজন, যিনি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “আমি নিজেই ক্যাম্পে ছিলাম। এক মাস কোনো কাজ নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই। পরে আমাকে টাকার বিনিময়ে এক কফিলের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।”
তিনি আরও জানান, সাধারণত এসব ভিসার আওতায় প্রবাসীরা লোড-আনলোড, ক্লিনার, অফিস সহায়ক বা নিম্নমানের শ্রমিক হিসেবে পাঠানো হয়। তাদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়োগদাতা থাকে না। সৌদি পৌঁছানোর পর ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে এক মালিক থেকে অন্য মালিকের কাছে বিক্রি করা হয়।
ভয়াবহ চিত্র:ভিসা থাকলেও নির্ধারিত কোনো কোম্পানি থাকে না।ক্যাম্পে ২০ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়।প্রতিবাদ করলে মারধর, রিমান্ড, এমনকি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় যাতে পালাতে না পারে।বেতন চুক্তির চেয়ে কম, কাজের সময় দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, “একই এজেন্সি থেকে আসা ৫০ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জন ভালো জায়গায় কাজ পান, বাকিরা নানা বিপদে পড়েন। এজেন্সি ও দালালরা আমাদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
দালাল সিন্ডিকেটের ভয়াবহতা:এই প্রতারণা শুধুমাত্র বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, সৌদি আরবেও রয়েছে একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেট। বাংলাদেশি দালাল, সৌদি কফিল ও স্থানীয় ক্যাম্প পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মিলে এই মানবপাচার ব্যবসা পরিচালনা করছে।
আহ্বান:ভুক্তভোগী প্রবাসী ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের কাছে এই বিষয়গুলো তুলে ধরব। আমি চাই, ভুয়া এজেন্সি ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “প্রবাসে কেউ যেন আর প্রতারণার শিকার না হয়, এজন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সবাইকে অনুরোধ করছি, বিদেশে যাওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে, চুক্তিপত্র দেখে, বিশ্বস্ত মাধ্যম ব্যবহার করে ভিসা গ্রহণ করুন।”
বাংলাদেশের লাখো মানুষের স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের। কিন্তু কিছু অসাধু দালাল সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে। প্রবাসীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।