
সংবাদ প্রতিবেদন : মোঃ শাহজাহান বাশার
স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসবমুখর ও গর্বিত এক আয়োজন। তবে এই আনন্দ আয়োজনের আড়ালে থেকে গেছেন যারা দিনরাত পরিশ্রম করে পুরো অনুষ্ঠানটিকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করেছেন—চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের প্রায় আড়াই হাজার সদস্য। হতাশার বিষয় হলো, তাদের জন্য ছিল না কোনো খাবার, পানি কিংবা ন্যূনতম সহানুভূতির প্রকাশও।
সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশ থেকে আনা হয়েছিল আধুনিক প্রযুক্তির ৪০টি আর্চওয়ে। কঠোর তল্লাশির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, অতিথি ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন পুলিশ সদস্যরা। ভোর থেকে রাত, আবার রাত থেকে পরদিন সকাল—এই টানা দায়িত্ব পালনের সময় তারা পাননি এমনকি এক বোতল পানিও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বরাদ্দ করেনি এক প্যাকেট শুকনো খাবারও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দিনরাত কাজ করেছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, অনেক অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। অথচ আমাদের জন্য কেউ এক গ্লাস পানিও রাখেনি। এটা শুধু অবহেলা নয়, অপমানের শামিল।”
আরেক কর্মকর্তা বলেন, “প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভেবেছিল, স্বেচ্ছাসেবকরাই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু যখন বোঝা গেল বাস্তবতা ভিন্ন, তখন পুলিশের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়। অথচ আমাদের সঙ্গে কোনও সম্মানজনক সমন্বয় বা সেবা-ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি বিশ্রামের ব্যবস্থাও ছিল না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন—যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অবদানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ তাদের ছায়ার মতো উপস্থিতি ছাড়া এমন একটি বৃহৎ আয়োজন সফল হতো না।
একজন সিনিয়র শিক্ষক হতাশ কণ্ঠে বলেন, “শিক্ষার্থীদের উৎসব আমাদের গর্ব, কিন্তু যারা এই গর্বকে নিরাপদ রাখে তাদের সঙ্গে এমন অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না। ভবিষ্যতে প্রশাসনের উচিত এসব বিষয় পরিকল্পনার শুরুতেই গুরুত্ব দেওয়া।”
অভিযোগ রয়েছে, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কমিটির সভা ও প্রস্তুতিতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রাসঙ্গিক আলোচনা হয়নি। এমনকি সমাবর্তনের নির্দিষ্ট দিনেও কোথায় কার দায়িত্ব থাকবে—সে তথ্য জানাতে হয়েছে নিজ উদ্যোগে খোঁজ নিয়ে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ যেন পুনরাবৃত্তি না হয়—সে বিষয়ে প্রশাসনের নিকট জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন।
একটি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি এমন চরম অবহেলার শিকার হন, তবে তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন অব্যবস্থাপনা সত্যিই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।