
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাহজাহান বাশার
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মির্জা আব্বাস আবারো আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এবং এটি কোনো অনুমান নয়—এটি একটি অকাট্য সত্য। শুধু তাই নয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত আট মাসে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ তোলেন মির্জা আব্বাস। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই সরকার এখন দুর্নীতির সাম্রাজ্য কায়েম করেছে। সরকারি দলের লোকজনই এখন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের হাতে দেশের অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে আমাদের একটাই শত্রু ছিল—আওয়ামী লীগ। এখন আমাদের চারদিকে শত্রু, তবে আমরা তাদের ভয় পাই না। তারা যতোই ষড়যন্ত্র করুক, বিএনপির রাজনীতিকে দমন করা যাবে না। অনেকে ভাবছেন, এখন বিএনপির সুদিন—হ্যাঁ, আমরা বলছি, বিএনপির জয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
টাকার পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ:
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও দেশ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই সরকার আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে মিলে দেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের মানুষের হাতে কাজ নেই, পেটে ভাত নেই, অথচ শাসকগোষ্ঠী বিলাসী জীবন যাপন করছে।”
তিনি বলেন, “একটা সময় আমরা দেখেছি, টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ তকমা জুটত। অথচ এখন তারাই স্বীকার করে নিয়েছে, টাকা বিদেশে যাচ্ছে। এটি কোন সরকারের ব্যর্থতা নয়, এটি তাদের অপরাধ।”
রাজনৈতিক সংকট ও শত্রু প্রসঙ্গ:
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, তারা এখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছে। এমনকি কিছু তথাকথিত দল, যাদের কোনো জনসমর্থন নেই, তারাও আমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা ভয় পাই না, বিএনপির শক্তি জনগণ। দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। ইনশাআল্লাহ, এই স্বৈরাচারী শাসনের পতন হবেই।”
নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আমাদের দলের ভিত শক্ত করতে হলে তৃণমূলের প্রতিটি মানুষকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। কুমিল্লা বিভাগসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে বিএনপির প্রতি নতুন করে আস্থা জন্মেছে। সেই আস্থা ধরে রাখতে হলে আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে।”
তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা মাঠে থাকুন, মানুষের পাশে থাকুন। সময় খুব দূরে নয়—যখন জনগণের সরকার গঠিত হবে। সেই সরকারই জনগণের সব অধিকার ফিরিয়ে দেবে।”
উপস্থিত ছিলেন যারা:
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তারা সবাই মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের প্রতি একমত প্রকাশ করেন এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন জোরদারের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মির্জা আব্বাসের এ বক্তব্য বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তিনি যে ভাষায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়াবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে এখনও এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।