আমলহীন উপদেশ নিন্দনীয় বিষয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো? তারপরও কি তোমরা চিন্তা করো না? আর ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো! অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন, তবে বিনয়ী লোকদের জন্য মোটেও কঠিন নয়। যারা একথা বিশ্বাস করে যে, নিশ্চয়ই তারা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখীন হবে এবং অবশ্যই তারা তারই দিকে ফিরবে।
’ -সূরা আল বাকারা: ৪৪-৪৬
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত কাতাদা (রাহ.) বলেন, বনী ইসরাঈলরা মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য, তাকওয়া ও কল্যাণের কাজের আদেশ করতো; অথচ নিজেরা এর উল্টো চলতো। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাদের এমন কাজকে ভর্ৎসনা করেছেন।
ইমাম ইবনে জারীর (রাহ.) বলেন, আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুনাফিকরা মানুষকে নামাহ ও রোজার আদেশ করতো; অথচ যেসব কল্যাণকর কাজের আদেশ করতো, তা নিজেরা পরিত্যাগ করে চলতো। তাদের এমন আমলহীন দাওয়াতের প্রতি তিরষ্কার করে আল্লাহতায়ালা এ মন্তব্য করেন।
আসলে যে ভালো কাজের আদেশ দেবে, সে ওই কাজে দ্রুত ধাবিত হবে- এটা স্মর্তব্য।
বর্ণিত আয়াতের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন হলো- নিজে আমল না করে অপরকে ভালো কাজের আদেশ দেওয়া যাবে কী?
এ প্রশ্নের জবাবে ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভালো কাজের আদেশ একটি বিষয় এবং ভালোর ওপর আমল করা অন্য বিষয়।
প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক বিনিময় রয়েছে।
নিজে আমল না করতে পারলে অপরকে বলা যাবে না- এমনটি নয়; বরং তা জায়েজ। আল্লাহতায়ালা তাদের ভালো কাজের প্রতি দাওয়াত বিষয়ে তিরস্কার করেননি। বরং তাদের আমলহীনতার প্রতি ভর্ৎসনা করেছেন।
তবে ইসলাম মনে করে, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ হতে বারণকারীকে অবশ্য অধিকতর পরহেজগার হওয়া বাঞ্ছনীয়। মুত্তাকি ব্যক্তির দাওয়াত ভালো ফল বয়ে আনে। পক্ষান্তরে নিজে আমল না করে অপরকে দাওয়াত দেওয়া যদিও জায়েজ, তবুও তা নিন্দনীয়। এ ধরনের ব্যক্তিদের দাওয়াত ফলদায়ক নয়। আর এ শ্রেণির মানুষের জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি রয়েছে।
মুসনাদ আহমাদের এক বর্ণনায় আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসরার (মিরাজ) রাতে আমি এমন একশ্রেণির মানুষের নিকট দিয়ে গমন করলাম, যাদের জিহ্বাকে জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। আমি জিবরাঈলকে (আ.) জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো তোমার উম্মতের দুনিয়াদার বক্তা। তারা যেসব ভালো কাজের আদেশ করতো, তা নিজেরা ভুলে বসত, অথচ তারা কিতাব পাঠ করছে। তবুও কি তারা বুঝবে না।
বর্ণিত আয়াতের শিক্ষা হলো-
এক. ইহুদি-খ্রিস্টানদের ছলনা হলো- তারা মানুষকে ভালো ভালো কথা শুনিয়ে আস্থা অর্জন করবে; অথচ তারা কখনও ভালো কাজ করবে না।
দুই. নিজে আমল না করে অপরকে ভালো কাজের আদেশ-উপদেশ দেওয়া ইহুদি আলেম ও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
তিন. নিজের আমলের ত্রুটি থাকলেও দাওয়াতি কাজ বন্ধ করবে না। কেননা, দাওয়াত ও আমল দু’টি পৃথক বিষয়। তবে আমলসহ দাওয়াতের ফলাফল সুদূর প্রসারি।
অতএব, আসুন! আমরা নিজেরা ভালো কাজ করি এবং সে পথে মানুষকে দাওয়াত দেই।