মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দী নেতা–কর্মীদের মুক্তি, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবির আন্দোলনে বিভক্ত হয়ে পড়ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এই বিভক্তকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ২৯ ডিসেম্বর সংগঠনটির মহাসমাবেশ স্থগিত করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির একাধিক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করলে সরকার ‘অসন্তুষ্ট’ হবে, তাই মহাসচিব সংগঠনটির আমিরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মহাসমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচনের আগে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি আদায় করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল হেফাজত। সেই ছক অনুযায়ী গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করে ইসলামি ঘরানার এ সংগঠনটি। ওই সমাবেশ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। সেই থেকেই সরকারের নজরে রয়েছে সংগঠনটির কর্মকাণ্ড।
এদিকে মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজাহারীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের নীতিনির্ধারণী ফোরামের মুরব্বিরা দেশের চলমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মহাসমাবেশ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নীতিনির্ধারণী ফোরাম দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান দিলেও আদৌ নির্বাচনের আগে সংগঠনটি কোনো কর্মসূচি করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে কী না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা বলছেন অন্য কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সময় মহাসমাবেশ করলে সরকার ‘অসন্তুষ্ট’ হবে এ জন্য মহাসচিব সাজিদুর রহমান মহাসমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহাসমাবেশ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জানেন না। মহাসচিব একক সিদ্ধান্তে সমাবেশ স্থগিত করেছেন।’
মহাসমাবেশ স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির যুগ্ম-মহাসচিব মীর ইদরিস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কই না তো, এখন পর্যন্ত কিছু (সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা) আসছে নাকি!’
কিন্তু এই নেতা এ উত্তরগুলো যখন ঢাকা টাইমসকে দিচ্ছিলেন, এর কিছু সময় আগেই ঢাকা টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে সমাবেশ স্থগিতের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি। তখনও এই নেতা সমাবেশ স্থগিতের বিষয়টি জানতেন না।
এ বিষয়ে কথা হয় হেফাজত ইসলামের আরেক যুগ্ম মহাসচিব মাহফুজুল হকের সঙ্গে। মহাসমাবেশ স্থগিতে পিছনে সরকারের সন্তুষ্টি ও বা চাপ আছে কি না- এ প্রশ্ন শুনেই ফোনকল কেটে দেন এই নেতা।
সংগঠনটির একটি সূত্র জানায়, ‘সরকার নেতাকর্মীদের মুক্তির আশ্বাস পূরণ করছে না বলেই সমাবেশ ডাকা হয়েছিলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একাধিক বৈঠক করে হেফাজত নেতাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে যে কথা দিয়েছিলেন, সেই কথাও তিনি রাখেননি। আর এখন মহাসমাবেশই স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে!’
জানা গেছে, সারাদেশে অন্তত ২৫৩টা মামলায় হেফাজত ইসলামের ৭হাজারের বেশি নেতাকর্মী এজহারভুক্ত আসামি। আর অজ্ঞাত আসামি দুই থেকে আড়াই লাখ।
এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমানের ফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকাটাইমস