ময়মনসিংহের ৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ২ আসনে স্থগিত সিদ্ধান্তে উৎকণ্ঠা

মোঃ শাহজাহান বাশার ,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বাকি দুটি আসনের প্রার্থিতা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করেন।

প্রার্থী ঘোষণার পরপরই ময়মনসিংহের নয়টি আসনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও আতশবাজির মাধ্যমে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে প্রার্থীদের সমর্থকরা। তবে স্থগিত থাকা দুটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা ও হতাশা।

ঘোষিত নয়টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা হচ্ছেন—ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট–ধোবাউড়া): বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ,ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর–তারাকান্দা): জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার ,ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর): বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসে ,ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা): দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু ,ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া): উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হকের নাতজামাই আখতারুল আলম ফারুক ,ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল): বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন ,ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ): উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু ,ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল): বিবিসির সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী ,ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা): দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও আলোচিত নেতা ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু

প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। পোস্টার, ব্যানার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নবঘোষিত প্রার্থীরা।

স্থগিত রাখা দুটি আসন হলো—ময়মনসিংহ-৪ (সদর),ময়মনসিংহ-৯ (গফরগাঁও)

দুটি আসনই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনটি হেভিওয়েট রাজনীতিবিদদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বরাবরই আলোচনায় থাকে।

জানা গেছে, সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন। তবে এবার তাঁর নাম প্রাথমিক তালিকায় না থাকায় ওই আসনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্থগিত থাকা দুটি আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে দলের নীতিনির্ধারণী মহল জানিয়েছে।

ঘোষিত নয়টি আসনে ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রার্থীরা গণসংযোগ, শুভেচ্ছা বিনিময়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। একাধিক উপজেলায় বিএনপি সমর্থকরা দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ময়মনসিংহের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন পর বিএনপি পুনরায় সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হচ্ছে। স্থগিত দুটি আসনের প্রার্থিতা ঘোষণার পর জেলার রাজনৈতিক চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।