
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নোয়াখালীঃ
সুবর্ণচর উপজেলার আক্তার মিয়ার হাটে বাহক দিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়কে কেন্দ্র করে চলছে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, ইজারাদার নিজে টোল আদায় না করে সরকারি নীতিমালা লঙ্গন করে অবৈধভাবে স্থানীয় এক বাহককে বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে বাজারে আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা ও অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বাংলা বছরের ১লা বৈশাখ (১৪৩২) তারিখে সরকারের পক্ষ থেকে সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে স্থানীয় কোনো ব্যবসায়ী ইজারা না পাওয়ায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার নোমান পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তি আক্তার মিয়ার হাটের ইজারা নিয়েছেন।
ইজারা পাওয়ার পর তিনি নিজে বাজার পরিচালনা না করে অবৈধভাবে আমির হোসেন নামে এক বাহককে টোল আদায়ের দায়িত্ব “স্ট্যাম্পের মাধ্যমে” হস্তান্তর করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এই ব্যক্তি সরকারি নির্ধারিত টোলের চেয়ে দশগুণ বেশি অর্থ আদায় করছেন। বাজারে যারা নিয়ম জানতে চান বা প্রতিবাদ করেন, তাদের সঙ্গে তিনি অশোভন আচরণ, গালমন্দ করেন। কাঁচা বাজার, ফলের দোকান, মাংস বিক্রেতা, এমনকি অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- “সরকারি নির্ধারিত টোল ১০ টাকা হলে তিনি ১০০ টাকা নিচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে দোকান ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেন। বাজারে ব্যবসা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বাজার কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েক দফা আমির হোসেনকে সতর্ক করলেও তিনি শোনেননি। বরং তাদের প্রতিও কটূক্তি করে বলেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার (হাট-বাজার ইজারা) বিধিমালা অনুযায়ী, ইজারাদার নিজে ছাড়া অন্য কাউকে বাজার পরিচালনা বা টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ। বিধি অনুযায়ী, ইজারাদার যদি নিজ দায়িত্বে বাজার পরিচালনা না করেন বা অন্যকে দায়িত্ব দেন, তাহলে প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ইজারা বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করতে পারবেন বলে শর্ত রয়েছে নীতিমালায়।
এই প্রেক্ষাপটে বাজারের ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সম্প্রতি সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়- “নোমান পাটোয়ারী ইজারা পাওয়ার পর অবৈধভাবে আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়, গালাগাল ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তাই আক্তার মিয়ার হাটের ইজারা বাতিল করে স্থানীয় সৎ ব্যবসায়ী ও নতুন ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন”।
অভিযোগ পত্রে বাজারের পরিচিত ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন (নিরব ডেকোরেটর ও ফল ব্যবসায়ী) স্বাক্ষর করেন এবং সঙ্গে বাজার কমিটি ও বহু ব্যবসায়ীর গণস্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাজারের সুষ্ঠু পরিবেশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। স্থানীয়রা বলেন, এভাবে বাজার পরিচালনা চলতে থাকলে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ সরকারি রাজস্ব সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না।
একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন-“এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বাজারে সন্ত্রাস ও টোল চাঁদাবাজি আরও বাড়বে। প্রশাসনের কাছে আমরা ন্যায্যতার দাবি জানাচ্ছি।”
আক্তার মিয়ার হাটের কামার ব্যবসায়ীরা বলেন- তিনি এই বাজারে অনেক আগ থেকে ব্যবসা করে আসছেন যত সরকার আসছে কেউ তার থেকে কোন ট্যাক্স বা টোল নেন নাই।এবং আমির হোসেন তার নিকট তার দোকান থেকে টোল নিচ্ছে। আমি দিতে অস্বীকার করলে তিনি একটু গরম দেখাইলে আমি দিতে বাধ্য হই পরবর্তী এখন ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।
ডেকোরেশন ব্যবসায়ী জসিম বলেন – আমি এই বাজারে অনেক আগ থেকে ডেকোরেশন ব্যবসা করে আসছি, ব্যবহৃত কাপড় গুলো ধুয়ে বাজারের টল ঘরে শুকাতে দিই। যে দিন বাজার হাট নেই সে দিন দিই। কিন্তু এখন আমি বাজারে কাপড় শুকাতে দিলে নাকি হোসেন কে টোল দিতে হবে এবং এখানো রাখতে হলে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে। আমি টোল না দেওয়ায় আমার জিনিস পত্র ফেলে দেয় এতে আমার প্রায় এক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়।
আরেক ব্যবসায়ী জানান- শুনলাম মাইজদীর এক ব্যক্তি এই বাজার ঢাক পেয়েছে।এখন কীভাবে আমির হোসেন ঢাক ফেলো সেটা তো জানি না। এখন তিনি নিজের মতো করে ২০০ টাকা খাজন নিচ্ছে। আগে যেখানে ১০০ টাকা দিতাম এখন দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা খাজনা।
এই বিষয়ে জানতে আক্তার মিয়ার হাট বাজার পরিচালনা (বণিক সমিতির) সভাপতি আজহার উদ্দিন বলেন- তার বিষয়ে অভিযোগের শেষ নেই সে যেগুলো করতেছে আ.লীগের আমলে ও হয়নি এগুলো। সে আগের তুলনায় অতিরিক্ত ট্যাক্স ( টোল) নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কে একাধিক জানিয়েছেন আমরা তাকে বার বার নিষেধ করা হলে ও সে আমাদের নিষেধ অমান্য করে। সে তার মতো করে বাজারের টোল আদায় করছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত আমির হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান- তিনি স্বীকার করেন নোমান পাটোয়ারী কে ইজারার সকল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।কিন্তুু বাজার ইজারা নিয়েছেন তিনি নোমান পাটোয়ারী।অতিরিক্ত ট্যাক্সের (খাজনা) বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।
বাজার কমিটির নেতারা জানান, তারা ইউএনও’র কাছে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাবেয়া আফসার সায়মা বলেন- অভিযোগটি পেয়েছি, আমি জেলাতে পাঠিয়েছি তারা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
নিউজ নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে প্রতিনিধি এর সাথে যোগাযোগ করুন।






