লাল সবুজের পতাকা মালদ্বীপে উড়ালেন বাংলাদেশের চিকিৎসক বাসুদেব সাহা

মালদ্বীপে পুরস্কার হাতে উচ্ছ্বসিত ডা. বাসুদেব সাহা।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মালদ্বীপের ভিলা ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অডিটোরিয়াম মালেতে এশিয়ান বিজনেস পার্টনারশিপ সামিট আয়োজিত ‘Human Harmony Conference & Award 2025’ অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে মালদ্বীপ সরকারের স্টেট ফর ফিশারিজ অ্যান্ড ওসেন রিসোর্স মিনিস্টার মো. মুতালিব ডা. বাসুদেব কুমার সাহার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। আন্তর্জাতিক এ পুরস্কার জয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে লাল সবুজের পতাকা উড়ান বাংলাদেশের এ চিকিৎসক।

আন্তর্জাতিক এ পুরস্কার অর্জনে নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ অর্জন আমার একার নয়।এটি আমার পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। এ অর্জন আমার পুরো টিমের।’ নিজের এ অর্জনটি তিনি উৎসর্গ করেছেন নাক কান গলা রোগে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে। যাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক এ পুরস্কার।

 

ডা. বাসুদেব কুমার সাহা বর্তমানে নাক কান গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি চিফ কনসালটেন্ট হিসেবে ম্যালিয়াস ইএনটি স্পেশালাইজড হসপিটাল লিমিটেডে নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং অপারেশন করছেন।

তরুণ প্রতিভাবান এ চিকিৎসক নাক কান গলা রোগ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেশেন্ট ফলোআপ করার মাধ্যমে রোগীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে মানব শান্তির এক উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মালদ্বীপে ‘Human Harmony Conference & Award 2025’ পুরস্কার গ্রহণ করছেন বাংলাদেশের ইএনটি স্পেশালিস্ট অ্যান্ড হেড নেক সার্জন ডা. বাসুদেব কুমার সাহা।

 

সম্প্রতি কুমিল্লা নিবাসী ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ রোগী আবুল কাশেমর ৪৫ বছর ধরে বহন করা প্রায় ১০ কেজি ওজনের একটি জটিল থাইরয়েড টিউমার টানা ১০ ঘণ্টা ধরে সফল অপারেশন করেছেন। শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে দিয়েছেন রোগী এবং তার পরিবারের মাঝে।

জানা গেছে, টানা ৪৫ বছর ধরে গলায় থাইরয়েড টিউমার নিয়ে বসবাস করেছেন ৬৫ বছর বয়সী আবুল কাশেম। সাত সন্তানের এই জনক দেশ ও দেশের বাইরে গিয়েও এই টিউমারের সঠিক কোনো সমাধান পাননি। অপারেশনে মৃত্যু ঝুঁকি থাকার কারণে বার বার পিছপা হয়েছেন তিনি। তাইতো অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই ধুঁকে ধুঁকে ৪৫ বছর অতিবাহিত করেছেন তিনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সময়য়ের সাথে সাথে টিউমারটি ফুলে ফেঁপে এমন অবস্থায় চলে গিয়েছিল যে টিউমারের অতিরিক্ত ভরে মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর ওপর চাপ তৈরি করেছিল বলে খাবার ঠিকমতো গিলতে পারছিল না। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বাঁচার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। জীবন মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে অনেকটা বাজপাখির মতো উড়ে এসে আবুল কাশেম ও তার পরিবার কে এক নতুন স্বপ্ন দেখান বাংলাদেশের তরুণ প্রতিভাবান ইএনটি স্পেশালিস্ট ডা. বাসুদেব কুমার সাহা। কয়েক দফায় রোগীটিকে দেখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেন টিউমারটির অপারেশন করার। অবশেষে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ডা. বাসুদেব তার ১০ সদস্যের একটি টিম নিয়ে টানা ১০ ঘণ্টা আবুল কাশেমের অপারেশন পরিচালনা করে মরণব্যাধি থাইরয়েড টিউমারটি সফলভাবে গলা থেকে আলাদা করেন।

এদিকে বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যখন মৃত্যু ভয় আর শঙ্কায় উদ্বিগ্ন সন্তান আর স্বজনরা ঠিক তখন অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে ডা. বাসুদেব নিজ মুখে জানালেন অপারেশন সাকসেসফুল। আব্বাজান জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। চোখ মেলে তাকিয়েছেন। শোনামাত্র আল্লাহ বলে চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন রোগীর ছেলে-মেয়েরা। আনন্দে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তারা। মাত্র তিন মাস আগে নিজের বাবাকে হারানো ডা. বাসুদেব রোগীর ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বাবা বাবা বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় এক মায়াময় পৃথিবী। যেখানে ফুটে ওঠে বাবার প্রতি সন্তানের এক অদৃশ্য ভালোবাসা আর একজন মানবিক চিকিৎসকের অদেখা অনুভূতি আর রোগীর প্রতি উজাড় করা অকৃত্রিম ভালোবাসা। Nasir Syntax Aluminium – Art of Aluminium with Glass

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলার সামনে এত বড় থাইরয়েড গ্লান্ডের সার্জারি পৃথিবীতে খুবই বিরল। আর সেই বিরল কাজটিই করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের চিকিৎসক বাসুদেব কুমার সাহা ও তার টিম। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা ধরে চলা অপারেশনে এনেস্থিসিয়া পরিচালনা করেন ডা. এসএমএ আলীম।

অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. বাসুদেব বলেন, ‘অপারেশনটি ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে থাকা টিউমার তার আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ, রক্তনালী, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, মাংশপেশীকে কঠিনভাবে আক্রমণ করেছিল, জড়িয়ে রাখা অনেকটা অক্টোপাসের মতো। এমন অবস্থায় এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাকচার থেকে টিউমারকে আলাদা করা ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জের। যেখানে একটু ধৈর্য্য চ্যুতি ঘটলেই সব কিছু ম্যাচাকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, নার্ভ কাটা পড়ার আশঙ্কা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান থেকে জ্ঞান না ফেরাসহ রোগীর করুণ পরিণতির সমূহ আশঙ্কা। এতগুলো চাপ মাথায় নিয়ে অপারেশন করাটা একটা যুদ্ধ জয়ের মতো অবস্থা ছিল। অবশেষে টিউমার অপসারণ করে যুদ্ধে জয়ী হই আমরা। আর এটি সম্ভব হয়েছে সৃষ্টি কর্তার অসীম কৃপা, মানুষের দোয়া আর আমার পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দক্ষতার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার টিমের প্রধান এনেস্থেটিস্ট ডা. আলীম ভাই, ইএনটি সার্জন ডা. নোবেল, ডা. আশিক, ডা. মামুন, ডা. সাব্বির, ডা. সোহান, ডা. আরাফাতসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে যে তিনি আমার মাধ্যমে এত জটিল একটি অপারেশন সফল করিয়েছেন।’

অপারেশন শেষে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় অশ্রুসিক্ত চোখে আবুল কাশেমের মেয়ে সালমা বলেন, ‘জন্মের পর বাবাকে কোনোদিন স্বাভাবিক চেহারায় দেখিনি। আমার সেই ইচ্ছাটা আজ পূর্ণ হলো।’

কাঁদতে কাঁদতে আবুল কাশেমর স্ত্রী বলেন, ‘ডা. বাসুদেব আমাদেরকে সারা জীবনের জন্য ঋণি করে দিয়েছে, আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

রোগী আবুল কাশেমের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন নামাজ পড়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে বলেছি, আল্লাহ আমাকে একটা ভালো ডাক্তারের সন্ধান দাও যে আমার এই টিউমারটা অপারেশন করতে পারবে। আমি এই অভিশপ্ত টিউমার নিয়ে কবরে যেতে চাই না। আল্লাহ আমার কথা শুনছে। আমার জন্যই ডা. বাসুদেবকে পাঠাইছে। আমি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। এখন ঠিকমতো খেতেও পারছি, ঘুমাতেও পারছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ডা. বাসুদেবকে আমি আমার ছেলে বানিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।’

আবুল কাশেমের স্বজনরা জানান, শুধু আবুল কাশেম নয়, তার মতো দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন রোগীকে মরণব্যাধি রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন তিনি। দিয়েছেন নতুন করে জীবনকে উপভোগ করার সময়। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিকাংশ রোগীর অপারেশন করেন তিনি। পাশাপাশি গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি।

তরুণ এই চিকিৎসকের দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক সুনাম রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ এই চিকিৎসকের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক ভিডিও দেখে দেশের মানুষ সচেতন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। তাদেরই একজন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. বাসুদেবের অনেক স্বাস্থ্য টিপস দেখি আমরা। তিনি খুব সুন্দর করে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম ও খাবারের তালিকা বলে দেন। এছাড়াও তার কাছে আসা অনেক রোগী মরণব্যাধি রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে, তার কাছে গেলে আমাদের আত্মীয় স্বজনরা সুস্থ্য হয়ে উঠবেন; এই আশায় তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসি আমরা।’

কামরুল নামের আরেক রোগী বলেন, ‘আমার গলার সমস্যা ছিলো। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে ভালো হয়নি। শেষমেষ কোনো কিছু না ভেবে ডা. বাসুদেবের কাছে ছুটে আসি। তিনি রোগীদের খুব সহজে সুস্থ্য করে তুলতে পারে, এমন কথা শুনেছি। তবে সত্যিকার অর্থেই তিনি ভালো মানুষ। অনেক আন্তরিকভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন ডা. বাসুদেব। পরিবারের দারিদ্র্যতাকে পিছু হটিয়ে নিজের প্রচেষ্টায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন। বহুমুখী প্রতিভাবান এই চিকিৎসক শুরু থেকেই রেখেছেন তার মেধার স্বাক্ষর। ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে এবং ১৯৯৬ সালে ফুলবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়, সালথা, ফরিদপুর থেকে যথাক্রমে প্রাইমারি ও ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ (বৃত্তি) লাভ করেন।

১৯৯৯ সালে ফুলবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়, সালথা, ফরিদপুর এবং ২০০১ সালে নটরডেম কলেজ থেকে স্টার মার্কস নিয়ে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসক হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে নাক কান গলা বিষয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি এমএস ভর্তি পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে ১ম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

২০২০ সালে তিনি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ইএনটিতে মেডিকেল সায়েন্সের সর্বোচ্চ এম.এস ডিগ্রি সাফল্যের সাথে অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইন্ডিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড থেকে নাক কান গলা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নাক কান গলা বিষয়ে তার বেশ কয়েকটি গবেষণা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে ডা. বাসুদেব কুমার সাহা ২০২৪ সালে ‘Nepal international Excelence award’, ২০২৫ সালে ‘Global Star Excelence Award’ ও ‘South Asian Excellence Award’ পেয়েছেন।

প্রকাশকঃএম এইচ, কে,নিউজ এডিটর, কালাম , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net