
মারুফ হোসেন:
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা বাকশীমুল গ্রামের কৃতি সন্তান মাদক বিরোধী আন্দোলন (মাবিআ) চেয়ারম্যান মো: আল আমিন বাকশীমুল জামে মসজিদে ইমাম ও সভাপতির অনুমতি ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন এবং পরে লিফলেট বিতরণ করেন। বাকশীমুল গ্রামের প্রবেশ পথে একটি সাইনবোর্ড লাগানের ইচ্ছা পোষন করে তিনি বলেন সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে মাদক মুক্ত আদর্শ গ্রাম বাকশীমুল।
লিফলেটে যা ছিল:মাদক বিরোধী আন্দোলন (মাবিআ) মাদক না জীবন? জীবন, জীবন প্রিয় এলাকাবাসী, মাদক আজকে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এর ছোবল থেকে আপনি আমি আমরা কেউ বাঁচতে পারবো না। যেখানে একজন মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকাসক্ত ব্যক্তি কখনোই চাইবে না তার সন্তান মাদকাসক্ত হোক সেখানে আপনি আমি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে রক্ষার জন্য কি করেছি? মাদকের বিরুদ্ধে কেন এই আন্দোলন? ১) ধর্মিয় ভাবে হারাম: ইসলামে মদ বা নেশা জাতীয় বস্তু অর্থাৎ মাদক গ্রহণ কিংবা সেবন করা যেমন হারাম, তেমনি এর ব্যবসা, এ কাজে সাহায্য এবং এ কাজের জন্য বাড়িঘর ও দোকান ভাড়া দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মদক গ্রহণ করা, তা বিক্রি এবং এর থেকে উপহার লাভ করা হারাম’ (বোখারি শরিফ, হাদিস ২২২৩)। ২) শারীরিক ক্ষতির কারন: মাদকাসক্তির কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহ, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়। ৩) অর্থনৈতিক ক্ষতির কারন: মাদক অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ক্ষতিসাধন করে। মাদক সেবনে ব্যক্তি অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। একসময় সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে পথে বসতে বাধ্য হয়। যে পরিবারে মাদকাসক্ত ব্যক্তি থাকে সে পরিবার ধীরে ধীরে দরিদ্রতার দিকে ধাবিত হয়। একসময় পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যায়। মাদকসেবী মাদকদ্রব্য ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণ করতে বাধ্য হয়। ঋণের বোঝা একসময় তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে। মদ ও নেশাদ্রব্য সেবন করতে গিয়ে মাদকসেবী চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অবৈধ কাজ করতে বাধ্য হয়। বছরে সেবন করা মাদক এক লাখ কোটি টাকার সমপরিমান, যা দেশের বাজেটের প্রায় এক চতুর্থাংশ। উন্নয়ন বাজেটের ৫৬ শতাংশ। ৪) আইনগত বিধান: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২৪ অনুযায়ী, বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। মাদকদ্রব্যের পরিমাণ এবং অপরাধের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে এই সাজা নির্ধারিত হয়। সাধারণভাবে, মাদকদ্রব্য পাচার, উৎপাদন, পরিবহন, এবং সেবনের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, সেই সাথে অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডই হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, গুরুতর অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। ৫) পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ: মাদকাসক্তির কারণে পরিবার সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, কারণ মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণ সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিবারের সাথে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না এমনকি সমাজের চোখে পুরো পরিবার অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই তাদের পরিবারের সদস্যদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। স্ত্রী ও সন্তানরা চলে যায় ঘরের বাইরে, নয়তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। ৬) সামাজিক অপরাধ : মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশার টাকা সংগ্রহ করতে নানারকম অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, খুন, গুম ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। আমাদের করনীয়: ১) প্রতিটি মহল্লার মসজিদের ইমামকে প্রধান করে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা এবং প্রতি জুম্মার দিন কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা। ২) প্রত্যেকে আগে নিজের পরিবারকে মাদক মুক্ত রাখার জন্য অঙ্গিকার করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। ৩) শিশুকাল হতে মাদকের কুফল নিয়ে শিশুদের সাথে আলাপ করা এবং তাদেরকেও মাদক বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। ৪) সমাজের মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা আপনার আমার প্রতিবেশী, আপনজন তাই তাদের সংশোধনের লক্ষ্যে মাদক বিরোধী সকল প্রোগ্রামের তাদের উপস্থিত রাখা যাতেকরে তারা মাদক ছাড়তে অনুপ্রাণিত হয়। ৬) সংশোধনের লক্ষ্যে প্রয়োজনে মাদকসেবি এবং মাদক কারবারিদের সামাজিক ভাবে বয়কট করা। সংশোধনের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে এবং মাদকের কুপ্রভাব মাত্রাতিরিক্ত বেরে গেলে থানায় অভিযোগ করা। মনে রাখবেন একদিন না একদিন এই মাদকের বিরুদ্ধে আপনাকে আন্দোলন করতেই হবে তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই হোক আমাদের মাদক বিরোধী আন্দোলনের পথচলা। সমাজের সবাই এক সাথে কাজ কারলে সমাজ থেকে মাদক কে বিতারিত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।