
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
মরহুম আলহাজ্ব মোঃ নূরুল ইসলাম (আবদুল হক মাস্টার) চেয়ারম্যানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ০২ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত দোয়া অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রবিবার দুপুরে মরহুমের নিজ বাড়িতে তাঁর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
আলহাজ্ব মোঃ নূরুল ইসলাম (আবদুল হক মাস্টার) ১৯৫৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। তিনি বি.এ. এবং বি-এড ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষাদান ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগের প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতেন।
মোরশেদা বেগম বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠে পরিণত করার দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯১ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মে পর্যন্ত রসুলপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯৬ সালের ১ জুন থেকে শ্রীমন্তপুর এম.এ. সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতা-উত্তর কোদালিয়া গ্রামে ‘পঞ্চায়েত প্রধান’ ও বাকশীমূল ইউনিয়ন পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭৩ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাকশীমূল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন।
আজ্ঞাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।২০১১ খ্রিস্টাব্দে দলীয় কাউন্সিলিং ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাকশীমূল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন এবং সাভভা ও দক্ষতার সঙ্গে পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, এতিমখানা, কবরস্থান, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্টসহ নানা অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন।
কালিকাপুর আবদুল মতিন খসরু সরকারি কলেজের সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের পাশাপাশি ছায়া-প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন।
নিজ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘ইকরা আদর্শ শিশু নিকেতন’টি জেলার শ্রেষ্ঠ শিশু নিকেতন হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
কেজি স্কুলগুলোকে একত্রিত করে “প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প” বোর্ড গঠন করেন এবং চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি বছর বৃত্তি পরীক্ষা ও বৃত্তি বিতরণের ব্যবস্থা করেন।
দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের জন্য শিক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা তিনি জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কুমিল্লা জেলার মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।
তিনি বিভিন্ন শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
বনায়ন ‘কালীক্কনগর সামাজিক বনায়ন’-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন, যা তিনি শেষ করে যেতে পারেননি।
রাজনৈতিক কার্যক্রম :১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাকশীমূল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।১৯৭২-২০০১ খ্রিস্টাব্দে বাকশীমূল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।২০০১-২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বাকশীমূল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।২০২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
শেষ বিদায়ের চিঠি (নিজ হাতে লিখিত)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রিয় মুসলিয়ানিকেরাম,
আমি দীর্ঘ ৭৫ বৎসর আপনাদের সাথে ছিলাম। আল্লাহ পাক আমাকে পার্থিব যতটুকু দান করেছেন, কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ পাক যদি হায়াত দান করতেন এবং প্রতি পদক্ষেপে একটা করে সেজদা দিতাম, তাহলেও আল্লাহ পাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় হতো না। আজকে শেষ বিদায়ের দিনে, আমার জানা-অজানা পার্থিব ও পরলৌকিক সকল অপরাধের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ পাক যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। সেজন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সকলে দোয়া করবেন।মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সকলে দোয়া করবেন।