রামগঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্ব: নিজেদের মধ্যেই কাদা ছোড়াছুড়ি, বিব্রত কর্মীরা

মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি এখন চরম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের মনোনয়নকে ঘিরে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কাদা ছোড়াছুড়ি ও চরিত্র হননের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা।

সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদপত্রের বিবৃতিতেও চলছে পারস্পরিক দোষারোপ। এতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন মাঠপর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা, বিব্রত স্থানীয় নেতৃত্বও।

অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন— “এভাবে নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাড়লে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ ক্ষতির মুখে পড়বে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রামগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন অন্তত ছয়জন। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, সাবেক ছাত্রনেতা হারুনুর রশিদ, তরুণ ব্যবসায়ী মাশফিকুল হক জয় ও স্থানীয় নেতা জহিরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন।

কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো সাক্ষাতের ডাক না এলেও, প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। এর ফলে দলের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব। কেউ কেউ নিজেদের ‘যোগ্য প্রার্থী’ প্রমাণ করতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, এমনকি ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের তোষণ’-এর মতো গুরুতর অভিযোগ তুলছেন।

অন্যদিকে, এসব অভিযোগকে ‘অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অস্বীকার করছেন অপরপক্ষ। একাধিক স্থানীয় নেতা জানান, “রামগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে এখন ঐক্যের চেয়ে বিভাজনই বেশি চোখে পড়ছে। একই দলের নেতারা যখন প্রকাশ্যে একে অপরকে দোষারোপ করেন, তখন কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন, বিভ্রান্ত হচ্ছেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ এই মনোনয়ন দ্বন্দ্ব আসন্ন নির্বাচনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, বিভক্ত রাজনৈতিক দল সাধারণত ভোটারদের আস্থা হারায় এবং সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

রামগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি তাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে— দলের নেতাদের মুখেই দলের ভাবমূর্তি ক্ষয়ে যাচ্ছে, এমনটাই বলছেন সচেতন মহল।“যে দলে এখনো ঐক্যের পরিবর্তে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, তারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। নিজেদের বিভক্তি কাটিয়ে না উঠলে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য ভবিষ্যতটা কঠিন হবে,”— এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 রামগঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া এই দ্বন্দ্ব কেবল স্থানীয় রাজনীতিতেই নয়, পুরো জেলাজুড়েই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ঐক্যবদ্ধ না হলে এই আসনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যেতে পারে।