
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট) আসনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে এখন চরম অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
এ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও, দলীয় কোন্দলই এখন বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
২০০১ সালে এ আসন থেকে বিএনপির হয়ে শেষবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন। তার মৃত্যুর পর থেকে এ আসনের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন। তিনি গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
অন্যদিকে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠনের পর মনিরুল হক সাক্কু টানা দু’বার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজিত হন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি তখন সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
২০২৩ সালের উপনির্বাচনেও সাক্কু প্রার্থী হন, কিন্তু পরাজিত হন। ওই সময় বিএনপি নেতা ইয়াছিন তার শ্যালক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেন। এতে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়।
সম্প্রতি মনিরুল হক সাক্কু ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের আশঙ্কা, সাক্কু ও ইয়াছিন উভয়েই নির্বাচনে নামলে কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, “বিএনপি একটি বড় দল। অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।”
তবে বিতর্ক থামছে না। বিশেষ করে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুল হক সাক্কু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ধরে সালাম করছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “হাসিনা আমার বড় আপা। উনি আমার বোনের সঙ্গে ইডেন কলেজে পড়েছেন। পারিবারিক সম্পর্কের কারণেই সালাম করেছি, এতে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।”
অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, “সাক্কু সাহেব যেভাবে কথা বলছেন, আমি এভাবে বলতে পারব না। উনি দলের কেউ নন। আমি দলের বাইরে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ নয়, বরং নিজেদের ভেতরের বিভাজন। মনিরুল হক সাক্কু ও হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের দ্বন্দ্ব যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ঐতিহ্যবাহী এই ‘ধানের শীষের দুর্গ’-এ বিএনপির জয় পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।






