চৌদ্দগ্রামে প্রবাসী উপর হামলা, নগদ টাকা-বৈদেশিক মুদ্রা সহ জরুরি কাগজপত্র ছিনতাই

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মো. রাকিব হাসান হৃদয় (২৫) নামে সৌদিআরব প্রবাসী এক যুবকের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় হৃদয় সহ তার পিতা আরব আলী ও বন্ধু মো. রাজু সহ অন্তত তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ওই প্রবাসীর সঙ্গে থাকা (বিয়ের সাজানী ও স্বর্ণ কেনার জন্য রাখা) নগদ তিন লাখ টাকা ও ১ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল সহ মূল্যবান কাগজপত্র (ব্যাংক কার্ড, প্রবাসের আইডি ও আকামা কার্ড) মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার মুন্সীরহাট বাজারে। পরে শোর-চিৎকার শুনে বাজারে থাকা লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় প্রবাসী হৃদয়, তার পিতা আরব আলী ও বন্ধু রাজুকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং সেখানে চিকিৎসা প্রদান করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগির পিতা উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বিষবাগ গ্রামের মৃত শুক্কুল মিয়ার ছেলে মো. আরব আলী বাদী হয়ে পাশ^বর্তী শুভপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে মো. সবুজ (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী সবুজ ও অজ্ঞাতনামা আসামীরা কিশোর গ্যাং এর সদস্য ও চিহিৃত মাদকসেবী। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকায় ছুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ নানান ধরনের অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। ঘটনারদিন ভিকটিম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বিষবাগ গ্রামের আরব আলীর ছেলে প্রবাসী মো. রাকিব হাসান হৃদয় তার বিয়ের জন্য সাজানী ও স্বর্ণ কেনার জন্য তার বন্ধু রাজু সহ মুন্সীরহাট বাজারে যান। তারা বাজারের একটি স্বর্ণ দোকানের সামনে গেলে হামলাকারী সবুজ ও তার সহযোগিরা তাদের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হৃদয়ের উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে প্রবাসী হৃদয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত কাটা-ছেড়া ও নীলা-ফুলা জখম হয়। এ সময় হৃদয়ের বন্ধু রাজু সন্ত্রাসীদের কবল থেকে তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে মারাত্মকভাবে জখম করে। সংবাদ শুনে হৃদয়ের পিতা আরব আলী মুন্সীরহাট বাজারস্থ তার দোকান থেকে ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা তাকেও বেধড়ক মারধর করে। সন্ত্রাসীরা হৃদয়কে গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্সীরহাট বাজার থেকে টেনে হিচড়ে পাশ^বর্তী চাঁনপুর গ্রামের মক্কা বেকারীর সামনে নিয়ে যায় এবং সেখানেও তাকে একটি কক্ষের মধ্যে বন্দি করে পুনরায় বেধড়ক মারধর করে। এ সময় হামলাকারীরা হৃদয়ের কাছে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা, ১ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, একটি দামি হাতঘড়ি, সাথে থাকা মানিব্যাগটি নিয়ে যায়। মানিব্যাগে বিদেশের আইডি, আকামা কার্ড ও ব্যাংক কার্ড সহ বিভিন্ন জরুরি কাগজপত্র ছিলো বলে জানা গেছে। পরে বাজারের ব্যবসায়ীরা সহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রাণে হত্যা করিবে মর্মে হুমকি-ধমকি প্রদান করে হামলকারীরা। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা প্রদান করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা আরব আলী বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মুন্সীরহাট বাজারের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ভিকটিমের পিতা আরব আলী সাংবাদিকদের জানান, মাত্র কয়েকদিন আগেই আমার ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে। তার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করেছি। বুধবার সন্ধ্যায় সে স্বর্ণ ও বিয়ের বাজার সদাই করতে মুন্সীরহাট বাজারে যায়। সেখানে অতর্কিতভাবে তার উপর হামলা করে চাঁনপুরের সবুজ ও তার সহযোগিরা। আমি চৌদ্দগ্রাম থানা প্রশাসনের নিকট এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

অভিযুক্ত সবুজের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক অনন্ত দাস জানান, ভুক্তভোগির পিতা কর্তৃক লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে থানা পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে।