মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ের পূবালী ব্যাংকের লাল দালানটি। আজকের দিনে এটি পূবালী ব্যাংকের শাখা হলেও একসময় এখানে ছিল উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ব্যাংক “দ্য কুমিল্লা ব্যাংকিং করপোরেশন”-এর প্রধান কার্যালয়। ১০৭ বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৪ সালে কুমিল্লার ব্যবসায়ী সমাজ ও উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়েছিল।
একসময় কুমিল্লাকে বলা হতো “ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর”। যেমন ধর্মসাগর, নানুয়ার দিঘি, উজির দিঘি, রানির দিঘি, কমলাসাগরের মতো বিখ্যাত ট্যাংকগুলোর পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, বাজার-বাণিজ্য ও আঞ্চলিক প্রভাবের কারণে কুমিল্লা শহরে একের পর এক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। তবে কালের আবর্তে আজ সেই সব ব্যাংক আর নেই, অনেক ট্যাংকেরও অস্তিত্ব মুছে গেছে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বাংলা দুই ভাগ হয়ে গেলে পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের মতো শহরগুলোতে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শক্তিশালী হতে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য তখন ব্যাংকব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯১৪ সালে কুমিল্লার উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠা করেন “দ্য কুমিল্লা ব্যাংকিং করপোরেশন”।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুমিল্লার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আইনজীবী নরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত। যদিও তাঁর আদি বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে, তবে কর্মজীবন ও ব্যবসার কারণে তিনি কুমিল্লা শহরেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মালিকানায় ছিল মনতলা টি এস্টেট, মনতলা ইস্পাত এবং কুমিল্লা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবসা। নানা ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তিনি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুমিল্লার ব্যবসায়-বাণিজ্যের ভিত আরও শক্ত করেন।
ব্যাংকটির কার্যক্রম প্রথম থেকেই বিস্তৃত ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার পাশাপাশি কলকাতা, দিল্লি, কানপুর, লখনৌ, মুম্বাইসহ ভারতবর্ষের বহু শহরে কুমিল্লা ব্যাংকিং করপোরেশনের শাখা খোলা হয়েছিল। সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, সুদূর লন্ডনেও ব্যাংকটির একটি শাখা চালু ছিল। সেই সময়কার একটি আঞ্চলিক ব্যাংকের লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃতি কুমিল্লার ব্যবসায়ীদের শক্তি ও সম্ভাবনার প্রমাণ বহন করে।
পরবর্তী সময়ে দেশভাগের পর উপমহাদেশের অনেক আঞ্চলিক ব্যাংক টিকে থাকতে পারেনি। কুমিল্লার এই ব্যাংকও টেকেনি। বিভিন্ন সময় একীভূত হয়ে ভারতের চারটি ব্যাংকের সঙ্গে মিলিত হয়। অবশেষে এসব ব্যাংকের সমন্বয়ে ১৯৫০ সালে গঠিত হয় “ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়া”। ফলে কুমিল্লার এই ঐতিহাসিক ব্যাংকটি নাম–চিহ্নে বিলীন হয়ে যায়।
বর্তমানে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ের যে ভবনে পূবালী ব্যাংক শাখা পরিচালনা করছে, সেই লাল দালানটি একসময় কুমিল্লা ব্যাংকিং করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ছিল। এ ভবনটিই এখন কুমিল্লাবাসীর কাছে অতীতের হারানো গৌরবের স্মৃতি বহন করছে।
একসময় কুমিল্লা শহর শুধু সংস্কৃতি ও শিক্ষা নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এই ব্যাংকের ইতিহাস আজও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়—কুমিল্লার বাণিজ্যিক ঐতিহ্য কতটা গভীর ও আন্তর্জাতিক ছিল।
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা পোটাল, এটা কোন প্রিন্ট দৈনিক পত্রিকা নয়।
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট/এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।