কুমিল্লা নটীর মসজিদ রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি আমেরিকা প্রবাসী মোশাররফ হোসেনের

মোঃ শাহজাহান বাশার,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় নিদর্শন—নটীর মসজিদ। ইতিহাস, লোককথা আর বেদনার স্মৃতি বহন করা এই স্থাপনাটি আজ ভগ্নদশায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একাধিকবার সংরক্ষণের যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে মসজিদটির অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন।এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা প্রবাসী, কুমিল্লার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কুমিল্লা সোসাইটি ও নর্থ আমেরিকার সাবেক সভাপতি এবং ব্রাহ্মণপাড়া মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এই প্রবাসী দানবীর নটীর মসজিদকে সংস্কার ও সংরক্ষণের জোর দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন—“নটীর মসজিদ কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়। এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ ইতিহাস জানাতে হলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতি আমার অনুরোধ, দ্রুত সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হোক।”

স্থানীয় জনশ্রুতি মতে, তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজার দরবার কাঁপানো শ্রেষ্ঠ বাইজি নূরজাহানের উদ্যোগে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু প্রথম নামাজ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় এরপর আর এখানে আজান বা জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। অপমান সহ্য করতে না পেরে নূরজাহানের করুণ আত্মত্যাগের কাহিনি আজও লোকমুখে প্রচলিত। বর্তমানে বটগাছের শেকড়ে জড়িয়ে থাকা এই মসজিদ ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা একাধিকবার এটিকে সংরক্ষণের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। তবে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মসজিদটি ধ্বংসের মুখে।নটীর মসজিদ সংরক্ষণের এই দাবিকে ইতোমধ্যেই সাধুবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, লেখক ও শিক্ষাবিদরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন—কলামিস্ট হাসান ইমাম মজুমদার, সাংবাদিক এনামুল হক ফারুক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লা, দৈনিক রূপসী বাংলার সম্পাদক তরুণ, আবুল কালাম আজাদ (সম্পাদক, কুমিল্লার কাগজ), সাংবাদিক ও কলামিস্ট ইয়াসমিন রিনা, জাকির আজাদ, শাহজাদা এমরান, সৈয়দ আহমেদ লাভলু, গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির প্রমুখ।

এছাড়া, দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ও গীতিকার আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়, কুমিল্লা প্রতিদিন সম্পাদক মো. সুমন শরীফ, সাংবাদিক মারুফ হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও একযোগে মসজিদ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং সাংবাদিক সমাজের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। তার দাবি, নটীর মসজিদের সংরক্ষণ যেন নাগরিক সমাজ, সুশীল মহল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় দাবি হয়ে ওঠে।

স্থানীয়রা মনে করছেন—এখনই পদক্ষেপ নিলে নটীর মসজিদ শুধু কুমিল্লার ঐতিহ্যের গর্ব নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। নাগরিক সমাজ, সুশীল মহল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান—চলুন, সকলে মিলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিকট দাবি জানাই, যাতে দ্রুত নটীর মসজিদের সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।