
মোঃ শাহজাহান বাশার
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। শুক্রবার (স্থানীয় সময়) রাত ৯টার দিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল তার সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাসে’ তাকে শপথ পড়ান।
নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শপথের পরপরই তার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠক থেকেই তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। এর আগে তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে তখন থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে নেপালে ব্যাপক আন্দোলনে নামে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি জেন-জিরা। গত সোমবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। এতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হন এবং আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
পরদিন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন। আন্দোলনকারীরা সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে হামলা চালান। এমনকি অর্থমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটে।
এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনী প্রধান অশোক রাজ সিগদেল এবং আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে সবার মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠে।
ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সুশীলা কার্কি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নেপালের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভারত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ভূমিকা রেখেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—অল্প সময়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিক্ষোভে নিহতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে সুশীলা কার্কির নিয়োগ নেপালে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল।