
মোঃশাহরিয়া সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় চারগুণেরও বেশি। ২০১৭ সালে নতুন করে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা এখন সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ২১ লাখে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে আসা রোহিঙ্গাদেরও উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে এখনও ছোট ছোট দলে রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। এই বিপুল জনসংখ্যার কারণে উখিয়া-টেকনাফে পরিবেশ, জলবায়ু ও আবাদি জমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। এসব ক্যাম্প এখন মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মানব পাচারের ঘাঁটিতে রূপ নিয়েছে। ইয়াবা ও আইস পাচার থেকে শুরু করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তথ্য বলছে, দেশে প্রবেশ করা মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। আঙ্কটাডের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার মাদক পাচার হয়। সীমান্ত ঘেঁষা ক্যাম্পগুলোকে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি।
জেলা পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের আট মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হত্যা, মাদক, অপহরণ ও ধর্ষণসহ নানা অপরাধে ২৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ১৮টি, মাদক মামলা ১৫০টি, অপহরণ মামলা ৫০টি এবং ধর্ষণের মামলা ১২টি। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোহিঙ্গা খুন হয়েছে এবং দায়ের হয়েছে প্রায় ২৮৭টি হত্যা মামলা। বর্তমানে অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের আবদুল হাকিম বাহিনী মুক্তিপণের জন্য অপহরণে কুখ্যাত। মুক্তিপণ না দিলে হত্যার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ক্যাম্পবাসীরা জানান, অপহরণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দা কালা মিয়া জানান, গত মে মাসে তাকে অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর মুক্তি পান তিনি। একই ক্যাম্পের সাবের আলমও ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ফিরে আসেন। তাদের অভিযোগ, এসব ঘটনায় অন্তত ১০টির বেশি গ্রুপ জড়িত।
রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, গত এক বছরে শতাধিক নতুন মাদক আখড়া গড়ে উঠেছে। বর্তমানে চার শতাধিক স্থানে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক বিক্রি ও সেবন হচ্ছে।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, ১৩টি ক্যাম্পে প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা থাকলেও পুলিশের সদস্য সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে তাদের পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, স্থানীয়দের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন জরুরি।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এলাকাবাসীর মতে, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।