
নিজস্ব প্রতিবেদক।
বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনের এক প্রভাবশালী আলেম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শহীদ আল্লামা শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকী (রহ.) হত্যাকাণ্ডের এগারো বছর অতিক্রম করেছে। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে মামলার তদন্ত কাজ শেষ হয়নি, বিচারও শুরু হয়নি। মামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারীসহ কয়েকজন আসামি আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) চেয়ারম্যান হযরত শাহসূফী ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী।
‘এখনও রহস্যের জট খোলেনি’
বুধবার (২৭ আগস্ট) আল্লামা ফারুকীর একাদশতম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন—
“দুঃখজনক হলেও সত্য, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের শীর্ষ আলেম ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার পরও দীর্ঘ এগারো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আজও এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে সক্ষম হয়নি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নানা সময়ে তারিখ ধার্য করা হলেও অদৃশ্য কারণে প্রতিবেদন দাখিলে গড়িমসি করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার যথাসময়ে না হওয়ায় ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজানসহ একাধিক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যকর তৎপরতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।”
সরকারের প্রতি হতাশা
বিএসপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বিগত সরকার রহস্যজনক কারণে ফারুকী হত্যার বিচারকাজ অগ্রসর করেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণ নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকার প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু এখনো আন্তরিকতার প্রমাণ মেলেনি।
তিনি বলেন, “এতে শুধু সরকার নয়, বিচার বিভাগ নিয়েও জনমনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার আন্তরিক হলে এ হত্যাকাণ্ডের জট খোলা সম্ভব।”
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী অবিলম্বে সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “আল্লামা ফারুকী হত্যার বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। নইলে জনগণ ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা হারাবে।”
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তরা আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার পর তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়েও মামলার তদন্ত অগ্রগতি খুবই নগণ্য।
তখনকার সময়ে আল্লামা ফারুকী ছিলেন একাধারে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় বক্তা ও সংগঠক। তিনি চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’, মাই টিভির ‘সত্যের সন্ধান’ এর উপস্থাপক ছিলেন। এছাড়া তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, একটি হজ কাফেলার চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা
বিবৃতির শেষাংশে বিএসপি চেয়ারম্যান আল্লামা ফারুকীর বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করেন।