
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাব দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। জবাবে তিনি জুলাই–আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান বলেন,“আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, এটি সত্য নয়। আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী একজন মানুষ। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্মের ব্যবসায়ীদের (যেমন জামায়াতে ইসলামী) বিরুদ্ধে অতীতেও বলেছি, ভবিষ্যতেও বলব।”
শোকজের জবাবে ফজলুর রহমান মোট ১১টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন।ফজলুর রহমানের ১১ পয়েন্টের সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ:
কোটাবিরোধী আন্দোলনের শুরু: কোটাবিরোধী আন্দোলন ছাত্র নেতৃত্বে শুরু হলেও নির্দলীয় ও রাজনৈতিক দাবিবিহীন ছিল। ফজলুর রহমান প্রথম উৎসাহ দিয়েছেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জীবনের শঙ্কা সত্ত্বেও যুক্ত থাকা: জুলাই আন্দোলনের সময় জীবনের শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তিনি দল ও দেশের মানুষকে পাশে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
বিএনপির মহাসমাবেশ ও অনলাইন প্রচেষ্টা: ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে বিএনপির লাখ লাখ জনতার সমাবেশ ভাঙা হলে তিনি অনলাইনে ও টক শোতে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছিলেন।
৫ আগস্ট আন্দোলন ও আনন্দ: ৫ আগস্ট আন্দোলনের বিজয়ে দেশের জনগণ জয়ী হয়েছিল, যা তার কাছে আনন্দের বিষয় ছিল।
জামায়াত-শিবিরের দাবির বিরোধিতা: সারজিস আলমের দাবি, যে জুলাই আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব জামায়াত-শিবির, তা অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি ও নেতৃত্ব বিএনপি দিয়েছিল।
অন্যায্য দাবির প্রতিবাদ: তিনি বলেন, আন্দোলনের সাফল্য তাদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা অনুচিত। তিনি জামায়াত-শিবিরকে ‘কালো শক্তি’ ও এনসিপিকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও সত্যের প্রতিরক্ষা: তিনি জামায়াত-শিবির ও এনসিপির বিতর্কিত বক্তব্যের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের সত্য বলতে থাকেন।
জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ: প্রথম হলো জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে গণ-আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা; দ্বিতীয় হলো জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও দলীয় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা: মেজর জিয়া ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি অপশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন।
ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্যের সম্ভাবনা ও ক্ষমাপ্রার্থী: তিনি স্বীকার করেছেন যে, কিছু বক্তব্যে ভুল থাকতে পারে, তবে তা প্রমাণিত হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন।
দলের ক্ষতি না করা ও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি: তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির কোনো ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা নেই এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকবেন।
ফজলুর রহমানের জবাবটি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করেছেন যে, দলের বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে সুবিচার হবে।