কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরীকে পুনর্বহাল করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগকে কেন্দ্র করে চার মাস আগে প্রত্যাহার করা কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে পুনরায় তার পূর্বের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রেরিত এক চিঠির মাধ্যমে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

রোববার (৩ আগস্ট) পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১ শাখার অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার শামীমা ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে তার পূর্বের পদে পুনরায় দায়িত্ব পালনের জন্য কিশোরগঞ্জে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গত ৭ মে দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ডে রওনা হন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই ঘটনা তৎকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন তোলে, কারণ কিশোরগঞ্জ সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা থাকায় তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই মামলায় সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতাকে আসামি করা হয়েছিল।

বিদেশ যাত্রার সময় মামলার বিষয়টি ইমিগ্রেশনে বিবেচনায় না আনার কারণে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে দায়িত্বরত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে উভয় কমিটি পৃথক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, কিশোরগঞ্জের এসপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো গাফিলতি করেননি এবং এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এতে তাদের নির্দোষ ঘোষণা করে পুনর্বহালের সুপারিশ করা হয়।

তদন্ত চলাকালীন সময় কিশোরগঞ্জে পুলিশ সুপারের পদটি শূন্য ছিল এবং তা অস্থায়ীভাবে অন্য এক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মো. হাছান চৌধুরী বলেন, “আমি কিশোরগঞ্জ স্টেশনেই আছি। সকলের সহযোগিতা এবং দোয়া চাই যেন আমি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি।” তিনি তার দায়িত্বে নিষ্ঠা এবং পেশাগত সততার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী সরকারের পতনের নয় মাস পর সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ ও মামলার জটিলতা প্রশাসনিকভাবে স্পর্শকাতর একটি বিষয় হয়ে ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে এসপি হাছান চৌধুরীর প্রত্যাহার এবং পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে পুনর্বহাল দেশের প্রশাসনিক বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের দিকটি তুলে ধরেছে।