
মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লা, ২ আগস্ট ২০২৫ – মাদকের থাবায় নাজেহাল কুমিল্লাবাসী। জেলার ভারত-সন্নিহিত সীমান্তপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রবেশ করছে ভয়াবহ নেশাজাতীয় দ্রব্য—গাঁজা, ইয়াবা, বিদেশি মদসহ নানা ধরনের প্রাণনাশী মাদক। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এই মরণনেশা ছড়িয়ে পড়ছে কুমিল্লা মহানগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোর আনাচে-কানাচে। গোমতির দুই পাড় থেকে শুরু করে অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাদক স্পট, যা এখন তরুণ সমাজ ধ্বংসের কারখানায় পরিণত হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, দেবীদ্বার, সদর দক্ষিণ এবং মেঘনা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করে। প্রায় ১০৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকলেও কাঁটাতারের এপারে থেকে ওপারে প্রতিদিন চোরাইপথে আসছে বিপুল পরিমাণ মাদক। মাদক পাচারে ব্যবহৃত হচ্ছে নদীপথ, মেঠোপথ, পুকুরপাড়, এমনকি সীমান্তবর্তী স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও মাঝেমধ্যে ‘ক্যরিয়ার’ হিসেবে জড়িয়ে পড়ছে এই চক্রে।
কুমিল্লা মহানগরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড, এমনকি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকেও আধা কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক মাদক বিক্রির আড্ডা রয়েছে। নগরীর থানা রোড, চকবাজার, টমছম ব্রিজ, ধর্মসাগর পাড়, গোমতির তীর, শাসনগাছা রেলগেট, বুড়িচং রোড, কোটবাড়ি সংলগ্ন এলাকা এবং বাদুড়তলা, আলেখারচর, ঝাউতলা, ক্যান্টনমেন্ট গেট এলাকা থেকে রাতের আঁধারে প্রকাশ্যে চলে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল বেচাকেনা। প্রশাসনের অভিযানের পর এক-দুইদিন নীরবতা থাকলেও দ্রুতই আবার শুরু হয়ে যায় মাদক কারবার।
কুমিল্লার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বেকার যুবকরা দিনদিন মাদকের করাল গ্রাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক তরুণ লেখাপড়া বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবন ও পাচারে। নেশাগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করছে, আবার কেউ জড়াচ্ছে চুরি, ছিনতাই বা সহিংসতায়। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৬-৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ইয়াবা ও গাঁজার আসক্তি ভয়ানক রূপ নিয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালালেও চিহ্নিত স্পটগুলো অদৃশ্য কারণে বারবার রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং প্রভাবশালী মহল এই মাদক ব্যবসাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। ফলে অভিযান ব্যর্থ হয় অথবা ‘ছোট মাছ’ ধরা পড়ে, কিন্তু রয়ে যায় মূল হোতারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র অভিযান দিয়ে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দরকার সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কাউন্সেলিং, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা এবং প্রশাসনের প্রতি কঠোর রাজনৈতিক নির্দেশনা। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন করতে না পারলে কুমিল্লা ক্রমেই হারিয়ে যাবে একটি নেশাগ্রস্ত শহরে।
আপনার কথা, আপনার শহর — মাদকমুক্ত কুমিল্লা গড়তে আমরা একসাথে।