
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ শাহজাহান বাশার
ঢাকা, ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার
দেশব্যাপী গ্যাস অপচয় ও অবৈধ সংযোগ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। তারই অংশ হিসেবে গতকাল ২০ জুলাই, রবিবার—ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে একযোগে পরিচালিত হয় ব্যাপক অভিযান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে একাধিক কারখানা ও বাসাবাড়ি থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ার চর বাউশিয়া ফরাজিকান্দি, চর বাউশিয়া পশ্চিমকান্দি এবং ভাটেরচর নতুন রাস্তা এলাকায় পরিচালিত অভিযানে তিনটি চুন কারখানায় অবৈধভাবে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জনাব মো. ওমর ফারুক, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। অভিযানে তিতাস গ্যাসের জোবিঅ-মেঘনাঘাট অঞ্চলের সহযোগিতা ছিল।
তিনটি চুন কারখানায় ১২টি চুল্লি ও ২০টি এয়ার মিক্স বার্নার ধ্বংস করে দেওয়া হয়। একইসাথে উৎসস্থলে ব্যবহৃত প্রায় ৪০০ ফুট হোজ পাইপ কেটে ফেলা হয়। এতে প্রতিমাসে ৩,৯১,৪৫০ টাকা মূল্যের গ্যাস চুরি রোধ সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
যদিও অভিযানের সময় মালিকরা উপস্থিত ছিলেন না, তবুও তাদের বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় নিয়মিত মামলা (এজাহার) দাখিল করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
একই দিনে, জনাব মিল্টন রায়, সিনিয়র সহকারী সচিব ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নেতৃত্বে গাজীপুর জেলার দত্তপাড়া, টঙ্গী এলাকায় ৩০টি আবাসিক সংযোগ পরিদর্শন করা হয়।
পরিদর্শনে দেখা যায়, ২টি বাড়িতে অবৈধভাবে বুস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, যা গ্যাসের অতিরিক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া একটি বাড়িতে অনুমোদনবিহীন অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। এতে সংশ্লিষ্ট বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং দুইজন গ্রাহকের কাছ থেকে ২৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অপরদিকে, জনাব সৈকত রায়হান, সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকার খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া এলাকায় পরিচালিত অভিযানে ১০৩টি অবৈধ ডাবল চুলা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে মোট ৮০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়।
স্থানীয়দের অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এসব এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার চলছিল। তবে এবার প্রশাসনের তৎপরতায় এলাকাবাসী কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে।
একই দিনে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সাভারের গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত মেসার্স সান টেক্স ডাইং ও মেসার্স ডার্ড কম্পোজিট নামক দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে স্থাপন করা বাইপাস লাইন চিহ্নিত করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ২০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ৫০,০৮১টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮০টি শিল্প, ২৯০টি বাণিজ্যিক ও ৪৯,৫১১টি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এছাড়া ১,০৬,৮১৪টি অবৈধ বার্নার এবং ১৯৮ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোঃ আল আমিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমে প্রচার কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে এবং নিয়মিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতীয় সম্পদ রক্ষায় এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো উচিত। একইসাথে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকুক, এবং যারা গ্যাস চুরি করে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে—তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত হোক।