মোঃ শাহজাহান বাশার | স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশকাল: ২০ জুলাই ২০২৫, কুমিল্লা
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীতল গ্রামের নারী চাঁদনী আক্তার মায়া—পিতা রহমান নিয়া—প্রথমদিকে একজন সাধারণ নারী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিণত হয়েছেন প্রতারণা, বিয়ের ফাঁদ, মিথ্যা মামলা এবং ব্ল্যাকমেইলের এক ভয়ঙ্কর প্রতীকে। আজ এই নাম উচ্চারিত হয় আতঙ্ক ও ঘৃণার প্রতিধ্বনিতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদনী আক্তার মায়া কখনো ‘চাঁদনী মায়া’, আবার কখনো ‘চাঁদনী আক্তার মায়া’ নাম ব্যবহার করে কমপক্ষে পাঁচজন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। প্রতিবারই বিয়ের আগে নিজেকে ‘কুমারী’ হিসেবে দাবি করেন এবং কাবিননামায় মোটা অঙ্কের টাকা উল্লেখ করেন। অথচ তিনি বহু আগেই বিবাহিত এবং তিনটি সন্তান রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন।
বিয়ের কিছুদিন পরেই তিনি স্বামীদের সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করেন মিথ্যা মামলা। এই মামলাগুলোর কারণে অনেক স্বামী আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যান, কেউ ঘরবাড়ি হারিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ আবার আত্মগোপনে রয়েছেন।
১. মুহাম্মদ কাউসার আহমেদ ভূঁইয়া — ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা
২. আশিকুর রহমান — মৌলভীপাড়া, কুমিল্লা সদর
৩. আরাফাতুল ইসলাম সাগর — মক্রমপুর, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা
৪. নুরনবী — শ্রীপুর, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
৫. জনি — ঝাউতলা, কুমিল্লা (বর্তমান স্বামী)
ভুক্তভোগী সিনথিয়া আরাফাত নিপা এবং আখি আক্তার অভিযোগ করেন, চাঁদনী তাদের স্বামীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন। এদের কেউ কেউ এখন পরিবারহীন, কেউ শিশু সন্তান নিয়ে পথে বসেছেন।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমার ১৮ বছরের সংসার ভেঙে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে আজ পথে পথে ঘুরি। চাঁদনী আমার জীবন ধ্বংস করেছে।”
আরেকজন জানান, “চার সন্তানসহ আমি ঘরছাড়া। মামলা, থানা আর সামাজিক চাপের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। আত্মীয়দের মুখ দেখাতে পারি না।”
প্রথম স্বামী মোহাম্মদ কাউসার জানান, তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। তিনি দীর্ঘ এক বছর যাবৎ সন্তানদের ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। কিন্তু চাঁদনী আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাবি করেছেন, এই সন্তানদের বাবা কাউসার নন। এমনকি নকল জন্মনিবন্ধন তৈরি করে সন্তানদের নিজের কাছে রেখেছেন এবং কাউসারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য সন্তানদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
'তালাশ ক্রাইম দৃষ্টি' পত্রিকার সাংবাদিক দ্বিন ইসলাম চাঁদনীর প্রতারণার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলে তাকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে, ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে হুমকি, দমন-পীড়নের অভিযোগও উঠেছে।
এই বিষয় নিয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন। প্রশাসনের এই নীরবতা ভুক্তভোগীদের হতাশ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদনী আক্তার মায়ার পেছনে রয়েছেন কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। যার ফলে বহু অভিযোগ ও মামলার পরেও তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
চাঁদনীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মামলা বর্তমানে কুমিল্লা দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আইনজীবীরা জানান, যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে তার প্রতারণার চিত্র আদালতের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে।
ভুক্তভোগীরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন—
“আমরা রাজনৈতিক প্রভাব নয়, ন্যায়বিচার চাই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ের আড়ালে কেউ যেন নিরীহ মানুষের জীবন ধ্বংস করতে না পারে। চাঁদনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
এই বিষয়ে চাঁদনী আক্তার মায়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি একটি অনুসন্ধানভিত্তিক রিপোর্ট। এতে উত্থাপিত সব অভিযোগ আদালতে বিচারাধীন এবং তদন্তাধীন। পরবর্তী প্রতিবেদনে চাঁদনীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রশাসনিক প্রভাব এবং ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা পোটাল, এটা কোন প্রিন্ট দৈনিক পত্রিকা নয়।
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট/এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।