স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় বসেনি অন্তর্বর্তী সরকার

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে ছাত্রশিবির সভাপতির জ্বালাময়ী বক্তব্য

মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা, ১৯ জুলাই:
অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, “আপনারা স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় বসেননি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে আজ আপনারা ক্ষমতা ভোগ করছেন। আমাদেরকে সংবিধান আর হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ হবে না।” তিনি অবিলম্বে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত বিশাল জাতীয় সমাবেশে প্রধান ছাত্রনেতা হিসেবে এই বক্তব্য রাখেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামীর প্রথম একক জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য ছিল সাহসী, আক্রমণাত্মক এবং দৃঢ়চেতা।

ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন,“আজকের এই অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র বা সংবিধানের কোনো নিয়মে ক্ষমতায় আসেনি। তারা রক্ত, ত্যাগ, শহীদের কান্না মাড়িয়ে এসেছে। এজন্য আমরা এই সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি—তৎক্ষণাৎ জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করুন। শহীদ ও গাজীদের স্বীকৃতি দিয়ে এই জুলাই মাসেই প্রোক্লেমেশন চাই।”

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,“জুলাই মাস কোনো ভুলে যাওয়া ইতিহাস নয়, এটা সংগ্রামের মাস। শহীদ পরিবারের আর্তনাদ আজও থামেনি। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা আজও পূরণ হয়নি। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সবার।”

বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনকে কেন্দ্র করে জাহিদুল ইসলাম বলেন,“গত ১৫ বছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে সন্ত্রাস, মাদক, অপসংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত করা হয়েছে। কোথাও নেই আদর্শ, নেই জবাবদিহিতা। শিক্ষাক্ষেত্রে বারবার সংস্কারের কথা বলা হলেও শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি।”

তিনি দাসত্বমূলক, পাশ্চাত্য প্রভাবিত ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলেন,“নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শিক ও ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা হতে হবে স্বাধীনতা, জাতীয়তা ও আদর্শের ভিত্তিতে।”

বক্তব্যে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন,“ছাত্র সমাজের মূল দাবি—শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এ নিয়ে চলছে টালবাহানা। যারা শিক্ষাকে ভয় পায়, তারাই ছাত্রদের সংগঠিত হতে দেয় না। আজকে আবারও খুনের রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা প্রতিরোধ করব।”

তিনি আরও বলেন,“সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। কারণ ছাত্র রাজনীতিই গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি।”

জাহিদুল ইসলাম বলেন,“আজকের এই জমায়েত প্রমাণ করে দিয়েছে—নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। ছাত্র-যুব সমাজ জেগে উঠছে। তারা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আর এই প্রজন্মই তৈরি করবে ইসলামী মূল্যবোধে গঠিত নতুন বাংলাদেশ।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের এই বক্তব্য মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী ‘জুলাই বিদ্রোহ’-এর সূচনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির জোটের রাজনৈতিক কৌশল, যা আগামী দিনের রাজপথে বড় রূপ নিতে পারে।