অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাস গ্যাসের জোড়ালো অভিযান

৪৭ হাজারের বেশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন, প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ

মোঃ শাহজাহান বাশার,
স্টাফ রিপোর্টার | ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সার্বিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার রোধে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে তীব্র অভিযান। এই ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে রবিবার (১৩ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলায় পৃথক দুটি অভিযানে বিপুল সংখ্যক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর এলাকায়, যেখানে তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ – জয়দেবপুর ও টঙ্গীর আওতাধীন একটি স্পটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সৈকত রায়হান এই অভিযান পরিচালনার নেতৃত্ব দেন।

অভিযানে প্রায় ৪০০টি আবাসিক বাড়িতে স্থাপিত ৫০০টি অবৈধ ডাবল বার্নার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় ২ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ১,০০০ ফুট লাইন পাইপ এবং ১/২ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ৩০০ ফুট হোস পাইপ অপসারণ ও জব্দ করা হয়। এই এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে জানা যায়।

সোনারগাঁওয়ে চুনা কারখানায় তীব্র অভিযান, ভাট্টির মালামাল ধ্বংস
একই দিনে সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোন সংলগ্ন এলাকায় আরও একটি বড় পরিসরের অভিযান চালানো হয়। এই অভিযান পরিচালনা করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব হাসিবুর রহমান।

অভিযানে তিনটি অবৈধ চুনা ভাট্টির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ১.৫ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ১২০ ফুট পাইপলাইন অপসারণ ও জব্দ করা হয় এবং উৎসস্থলে থাকা ১.৫ ইঞ্চি ব্যাসের পিভিসি পাইপ বিনষ্ট করা হয়।

অভিযান চলাকালে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি স্প্রে করে ভাট্টির চুনা প্রস্তুতের কাঁচামাল ধ্বংস করা হয় এবং এক্সকেভেটরের মাধ্যমে ভাট্টির নির্মাণ কাঠামো গুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি অবৈধ সংযোগের উৎস পয়েন্টে কিলিং এবং ক্যাপিং এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত এই এক বছরে পরিচালিত অভিযানে সারাদেশব্যাপী ২৭৪টি শিল্প, ২৭৩টি বাণিজ্যিক এবং ৪৬,৬১৯টি আবাসিক সংযোগসহ সর্বমোট ৪৭,১৬৬টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এই সংযোগগুলোর সাথে যুক্ত থাকা ১,০০,৬৬৭টি বার্নার অপসারণ করা হয় এবং সর্বমোট ১৯৩ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে।

এ ধরনের কার্যকর অভিযানের ফলে শুধু অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিপুল পরিমাণ অপচয় বন্ধ হয়নি, বরং বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহে ভারসাম্য রক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা সম্ভব হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোঃ আল আমিন এক বিবৃতিতে জানান,

“গ্যাস সংযোগের অবৈধ ব্যবহার যেমন জাতীয় সম্পদের অপচয় ঘটায়, তেমনি বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও সৃষ্টি করে। তাই এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অবৈধ সংযোগ বিরোধী এই অভিযান ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। জনগণকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার না করা হয়।”

তিনি আরও জানান, তিতাস গ্যাস নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে এসব অভিযান পরিচালনা করছে, এবং যেসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।